পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে সীমান্তে উভয় পক্ষ ভারী গোলাবর্ষণ করেছে। দুই পক্ষের কর্মকর্তারা বলেন, শুক্রবার গভীর রাতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে বিনা উসকানিতে প্রথমে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছেন। সাম্প্রতিক সময় এশিয়ার এ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। গত কয়েক মাসে সীমান্তে একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছে তারা। গত অক্টোবরে প্রাণঘাতী সংঘাতের পর দুই দেশ একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হলেও সীমান্তে মাঝেমধ্যেই গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
গতকাল রাতের সংঘাত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলডাক জেলা লক্ষ করে হামলা চালায়। এরপর আফগান বাহিনী পাল্টা জবাব দেয়। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত আর তথ্য দেননি। জাবিউল্লাহ মুজাহিদের ওই পোস্টের পর আজ শনিবার ভোরে পাকিস্তানও সংঘর্ষ নিয়ে মুখ খোলে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের একজন মুখপাত্র বলেন, আফগান বাহিনীই চামান সীমান্তে বিনা উসকানিতে প্রথম গুলিবর্ষণ করেছে।
পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে আবার সংঘর্ষ, ৫ পাকিস্তানি সেনা নিহত এক বিবৃতিতে মুখপাত্র মোশাররফ জাইদি আরও বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাৎক্ষণিক, উপযুক্ত ও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সীমান্তে আফগান অংশের বাসিন্দারা গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোলাগুলি শুরু হয় এবং প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে। কান্দাহারের তথ্য বিভাগের প্রধান আলী মোহাম্মদ হকমাল গণমাধ্যমকে বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী হালকা ও ভারী আর্টিলারি ব্যবহার করে আক্রমণ চালায়। মর্টারের গোলা সাধারণ মানুষের বাড়িতে আঘাত হেনেছে। তবে সংঘাত শেষ হয়েছে। উভয় পক্ষ গোলাগুলি বন্ধ করতে রাজি হয়েছে বলে জানান তিনি।
সীমান্তে পাকিস্তানের অংশে গণমাধ্যমের চামান প্রতিনিধি গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন।
২০২১ সালে তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখল করার পর আফগানিস্তান ও পাকিস্তান দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এ দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়েই মূলত দ্বন্দ্ব হচ্ছে। ইসলামাবাদ কাবুলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, বিশেষ করে পাকিস্তান তেহরিক–ই–তালেবানকে (টিটিপি) আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করছে। টিটিপি প্রায়ই পাকিস্তানে হামলা চালায়। আফগান সরকার অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
নতুন সংঘাতের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় আবারও অচলাবস্থা দুই দেশের মধ্যে গত অক্টোবরের সংঘাতে ৭০ জনের বেশি নিহত এবং কয়েক শ মানুষ আহত হন। পরে কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়; কিন্তু দোহা ও ইস্তাম্বুলে কয়েক দফা আলোচনার পরও কোনো স্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
গত মাসে কাবুল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমান্ত এলাকায় বিমান হামলা চালানোর অভিযোগ করে। কাবুল বলেছে, ওই হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের ৯টিই শিশু। ইসলামাবাদ ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অর্থসূচক/
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.