পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন

উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’সহ বেশ কয়েকটি অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

 

তিনি বলেন, সরকার ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুমোদন দিয়েছে। এর মাধ্যমে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে। এ কমিশনের দায়িত্ব হবে পুলিশকে জনবান্ধব করা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং বাহিনীকে আরো আধুনিকায়ন করা।

 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশনের প্রধান থাকবেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। এর সদস্য হবেন- জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা (গ্রেড-১ এর নিচে নয়), অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদমর্যাদার

একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (গ্রেড-১ এর নিচে নয়), বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত বা কর্মরত) এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বিশেষজ্ঞ।

 

তিনি আরো বলেন, পুলিশ যাতে প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে, সে ব্যাপারে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। এছাড়া পুলিশ যাতে মানবাধিকার সংবেদনশীল হয়, সে বিষয়ে পুলিশের কোথায়-কোথায় আধুনিকায়ন দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, সেগুলোও কমিশন চিহ্নিত করবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ কমিশনের আরো দু’টি কাজ হচ্ছে-পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করবে এ কমিশন।

 

কমিশন গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশনের নামগুলো আসবে। তার ভিত্তিতে সরকার নিয়োগ দেবে। সার্চ কমিটিতে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং জাতীয় সংসদের দু’জন প্রতিনিধি।

 

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছে।

 

সংশোধনের বিষয়বস্তু তুলে ধরে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটি হচ্ছে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না সেই সংক্রান্ত, আরেকটি হলো- পোস্টাল ব্যালট গণনাপদ্ধতি নিয়ে একটি বিধান আনা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন। এসব ভোট গণনার পদ্ধতি আনুষ্ঠানিকভাবে আরপিও-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেখানে ব্যালটে একটি সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে সেটি গণনায় ধরা হবে না, সিল না দেওয়া ব্যালটও গণনা করা হবে না। পোস্টাল ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘোষণাপত্রে (ডিক্লারেশন) স্বাক্ষর থাকতে হয়, সেটা না থাকলে গণনা করা হবে না। আর ভোটের দিন নির্বাচন কমিশন যে পর্যন্ত ভোট গ্রহণের সময় নির্ধারণ করে দেবে, সেই সময়ের মধ্যে যে ব্যালটগুলো (পোস্টাল) রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছাবে, সেগুলো একসঙ্গে গণনা করা হবে।

 

উপদেষ্টা জানান, বৈঠকে বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা অধ্যাদেশের খসড়াও অনুমোদন করা হয়েছে।

 

এছাড়া, বৈঠকে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি অধ্যাদেশ-এর খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড (ইমারত বিধি) যথাযথভাবে পালন নিশ্চিত করবে। সারাদেশের জন্য এটি প্রযোজ্য হবে।

 

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ সারাদেশে ভবন নিরাপত্তা মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য তদারকি করবে, ভূমিকম্প প্রস্তুতি নিশ্চিত করবে এবং সবুজ ও পরিবেশবান্ধব নির্মাণকে উৎসাহিত করবে। এই অথরিটি গঠিত হবে স্থপতি, পরিকল্পনাবিদ এবং প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে, যাদের সংশ্লিষ্ট কাজে অন্তত ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

 

আইন অনুযায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। বাসস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.