মিয়ানমার বিশ্বের অবৈধ আফিমের প্রধান উৎস

আফগানিস্তানে পোস্ত চাষ কমে যাওয়ার পর, মিয়ানমার এখন বিশ্বের অবৈধ আফিমের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটিতে আফিম উৎপন্নকারী পোস্ত গাছের চাষ বিগত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির চাষযোগ্য প্রায় সব এলাকাতেই আফিম চাষে ব্যবহৃত জমির পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

বুধবার (৩ নভেম্বর) জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম আল জাজিরা।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর (ইউএনওডিসি) মিয়ানমারে তাদের সবশেষ জরিপে দেখেছে, আগের বছরের তুলনায় পোস্ত চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ শতাংশ। গত বছর দেশটিতে পোস্ত চাষ হয়েছিল ৪৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এ বছর জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ১০০ হেক্টরে।

জনাব ডেলফিন শান্টজ, ইউএনওডিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিনিধি, বলেন, ‘চাষের এই ব্যাপক সম্প্রসারণ গত কয়েক বছরে আফিম অর্থনীতির পুনরুত্থানের ইঙ্গিত দেয়। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে।’

তবে ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে মিয়ানমারে পোস্ত চাষের জমি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লেও, হেক্টরপ্রতি আফিম উৎপাদন সেই হারে বাড়েনি। মিয়ানমারের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা, তীব্রতর সংঘর্ষ ও নিরাপত্তাহীনতাকে পোস্ত চাষের জমির সঙ্গে আফিম উৎপাদনের এই অসামঞ্জস্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

পোস্ত চাষ বাড়ার একটি প্রধান কারণ হলো আফিমের দাম বৃদ্ধি। ২০১৯ সালে ১ কেজি তাজা আফিমের দাম ছিল ১৪৫ ডলার। বর্তমানে মিয়ানমারে ১ কেজি আফিমের দাম ৩২৯ ডলার।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে মিয়ানমার উৎপাদিত হেরোইন বাণিজ্যের ‘নতুন লক্ষণ’ দেখা যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ড্রাগস এজেন্সি (ইইউডিএ) জানিয়েছে, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের শুরুর দিকে থাইল্যান্ড থেকে ইউরোপগামী বাণিজ্যিক ফ্লাইটের যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ কেজি হেরোইন আটক করা হয়েছে। এই হেরোইন মিয়ানমার ও আশপাশের এলাকায় উৎপাদিত বলে মনে করা হয়।

জনাব শান্টজ মন্তব্য করেন, ‘তীব্রতর সংঘাত, বাঁচার প্রয়োজন এবং বাড়তি মুনাফার লোভে মিয়ানমারের কৃষকরা পোস্ত চাষের দিকে ঝুঁকছেন। গত এক বছরে আমরা যে বৃদ্ধি দেখেছি তা মিয়ানমারের ভবিষ্যতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে যা ঘটছে তা শুধু ওই অঞ্চল নয়, আরও বিস্তৃত এলাকার মাদকবাজারকেও প্রভাবিত করবে। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.