বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে সরকার দু’টি বড় আবাসন প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত দু’টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
দু’টি প্রকল্পের মধ্যে একটি হলো- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ১ হাজার ৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ, যা ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মক্ষমতা হারানো জুলাই যোদ্ধাদের পরিবারকে দেওয়া হবে। প্রকল্পটি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (এনএইচএ) নিজস্ব জমিতে মিরপুর ডিওএইচএস সংলগ্ন এলাকায় বাস্তবায়ন করবে। এর আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৪ দশমিক ৪১৪২ কোটি টাকা, যা সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে নির্মিত হবে।
প্রকল্পটি জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০২৯ মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ১৫টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ভবন হবে ১৪ তলা বিশিষ্ট, যার মধ্যে একটি বেজমেন্ট থাকবে। প্রতিটি তলায় আটটি ফ্ল্যাট থাকবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট। বেজমেন্ট ও নিচতলায় গাড়ি পার্কিং সুবিধা থাকবে।
প্রকল্পের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ভূমি উন্নয়ন, ভবন নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর ও ফটক, বেড ও লিফট স্থাপন, ১০০০ কেভিএ সাবস্টেশন, ১৫০ কেভিএ জেনারেটর, পাম্প-মোটর সেট, সোলার সিস্টেম, ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম, ইন্টারকম সিস্টেম, ইনসুলেশন সুবিধা, সিসিটিভি সিস্টেম, লোড স্যাংশন ও বিদ্যুৎ সংযোগ এবং ফ্ল্যাট হস্তান্তর পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলের ব্যবস্থা।
২০২৫ সালের ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রস্তাবটি মূল্যায়ন করা হয় এবং একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। সভায় উল্লেখ করা হয়, স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়া ব্যক্তিদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে নিরাপদ, আধুনিক ও বিনামূল্যের আবাসন প্রদান করা হবে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (এনএইচএ) মাধ্যমে আরেকটি প্রকল্প প্রস্তাব করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তা হলো- ‘৩৬ জুলাই’ আবাসিক কমপ্লেক্স নির্মাণ। এটি মিরপুর ১৪-তে এনএইচএ-এর মালিকানাধীন ৫ দশমিক শূন্য ৮ একর জমিতে নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো- জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে স্থায়ী আবাসন প্রদান। এর আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬১ দশমিক ১৬০৭ কোটি টাকা, যা সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে হবে।
প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৯ মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ছয়টি ১৪ তলা ভবন (সাধারণ বেজমেন্টসহ) এবং ১২টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। মোট ৮০৪টি ফ্ল্যাট থাকবে, প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ১ হাজার ৩৫৫ বর্গফুট। ভবনগুলোতে বেজমেন্ট ও নিচতলায় গাড়ি পার্কিং সুবিধা থাকবে এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনুমোদিত ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নকশা ব্যবহার করা হবে।
প্রধান নির্মাণ কাজের মধ্যে রয়েছে- আরসিসি সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ আরসিসি রাস্তা ও ড্রেন, যাত্রী ও বেড লিফট, ১০০০ কেভিএ ও ২৫০ কেভিএ সাবস্টেশন, ১৫০ কেভিএ ও ৪০ কেভিএ জেনারেটর, সোলার সিস্টেম, ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম এবং সিসিটিভি স্থাপন।
প্রস্তাবটি ২০২৫ সালের ২৭ জুলাই একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। এতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরো পর্যালোচনা ও সামঞ্জস্য স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ডিপিপি পুনর্গঠন এবং ব্যয় উপাদান সংশোধনের পর ২০২৫ সালের ১৯ অক্টোবর দ্বিতীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে তা শোকাহত পরিবারগুলোকে নিরাপদ ও আধুনিক আবাসন প্রদান করে তাদের স্থিতিশীল ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রয়োজন মাফিক দু’টি প্রকল্পকে আলাদা বাস্তবায়ন সময়সূচিতে রাখা হয়েছে। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মক্ষমতা হারানো জুলাই যোদ্ধাদের পরিবারগুলোর জন্য মিরপুর ৯-এ ১ হাজার ৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ ২০২৫ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে চলবে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় প্রকল্প— মিরপুর সেকশন ১৪ নম্বরে ‘৩৬ জুলাই’ আবাসিক কমপ্লেক্স নির্মাণ, যা আন্দোলনে নিহতদের পরিবারগুলোর জন্য হবে। এর নির্মাণ কাজ ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়া ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ। কারণ, যোগ্যতা স্পষ্ট এবং সরাসরি যাচাই করা যায়। তবে, নিহতদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সহায়তায় স্থায়ী আবাসন প্রদান আরো সংবেদনশীল আইনি বিবেচনার সঙ্গে যুক্ত, বিশেষ করে উত্তরাধিকারের কারণে। সরকার ইতোমধ্যে প্রণীত ও অনুমোদিত নীতিগত কাঠামো অনুসরণ করবে, যাতে ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও আইনি সামঞ্জস্য নিশ্চিত হয়।
পরিকল্পনা কমিশন জোর দিয়ে বলেছে, উভয় প্রকল্পই ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মর্যাদাপূর্ণ আবাসন নিশ্চিত করা শুধু তাদের আত্মত্যাগের প্রতি জাতীয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশই করে না, বরং পরিবারগুলোকে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা সহায়তা দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাসস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.