ভারতের পেঁয়াজের বাজারে মন্দা

ভারতের পেঁয়াজের বাজার সাম্প্রতিক সময়ে মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশটির বড় ক্রেতা বাংলাদেশ বিপুল পেঁয়াজ নিচ্ছে না। এরসঙ্গে সৌদি আরবও ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ভারতের বদলে পেঁয়াজের জন্য পাকিস্তান ও চীনের দিকে ঝুঁকেছে এ দুই দেশ। যা নয়াদিল্লির পেঁয়াজ বাজারকে মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনোমিক টাইমস এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে।

মূলত ভারত স্থানীয় বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে একাধিকবার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে আমদানিকারী দেশগুলো বিকল্প বাজার খুঁজে নিয়েছে।

এরসঙ্গে ভারতের পেঁয়াজের বীজ ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলো পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধি ও নিজেদের স্বনির্ভর করছে বলে সতর্কতা দিয়েছে খাত সংশ্লিষ্টরা। এতে বিশ্ববাজারে ভারতের পেঁয়াজ চাষিদের অবস্থান ঝুঁকিতে পড়ছে।

দেশটির পেঁয়াজ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এক সময় ভারত বাংলাদেশে তাদের মোট পেঁয়াজ রপ্তানির চারভাগের তিনভাগ পাঠাত। কিন্তু গত আট মাসে খুব কম পরিমাণ আমদানি করেছে ঢাকা। যদিও বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় তিনগুণ বেশি। এছাড়া গত প্রায় এক বছরে সৌদি আরব ভারত থেকে খুব কম পেঁয়াজ কিনেছে। এক সময় ভারতের পেয়াজ রপ্তানিকারকদের মুখে বাংলাদেশ হাসি ফোটালেও এখন বাংলাদেশের কারণে কাঁদছে তারা।

রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, অবৈধভাবে ভারতের পেঁয়াজের বীজ বাংলাদেশসহ ভারতের অন্যান্য ক্রেতাদের কাছে চলে যাচ্ছে। এরমধ্যে আমদানিকারক দেশগুলো স্বনির্ভর হচ্ছে। যা এই খাতে ভারতের আধিপত্যকে আরও দুর্বল করছে।

অজিত শাহ নামে এক পেঁয়াজ আমদানিকারক ইকোনোমিক টাইমসকে বলেছেন, “আমাদের পেঁয়াজের কোয়ালিটির জন্য আমরা ভালো দাম আদায় করতে পারতাম। কিন্তু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা যখন আন্তর্জাতিক বাজারে ছিলাম না। তখন আমাদের ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজেছে। এখন ক্রেতারা আর কোয়ালিটি দেখে না। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলো কত দামে পেঁয়াজ দিচ্ছে, তারা সেটি দেখে।”

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আরও পাঁচ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির সরকার।

এরফলে ভারতের পেঁয়াজের ওপর যেসব দেশ নির্ভরশীল ছিল সেসব দেশে দাম বেড়ে যায়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ভারতের কাছে একটি কূটনৈতিক নোট পাঠায়। এতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে এত ঘনঘন পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

এখন স্থানীয় কৃষকদের রক্ষায় বাংলাদেশ ভারত থেকে আর পেঁয়াজ কিনছে না। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে ৭ দশমিক ২৪ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল। যা তাদের মোট রপ্তানির ৪২ শতাংশ ছিল।

সেখানে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ মাত্র ১২ হাজার ৯০০ টন পেঁয়াজ কিনেছে। যদিও এরজন্য বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা হয়।

কিন্তু রপ্তানিকারকরা বলছেন, বারবার রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণেই ক্রেতা দেশগুলো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বোর্ড অব ট্রেডের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য পাশা প্যাটেল বলেছেন, “আমরা শুধুমাত্র আমাদের ঐতিহ্যগত ক্রেতাদের হারাইনি, তারা ভারতের পেঁয়াজ বীজ ব্যবহার করে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া শুরু করেছে।”

ভারতীয় রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে তাদের পেঁয়াজ নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে রপ্তানিকারদের সঙ্গে কথা বলে ভারত সরকার। তখন তারা জানান, ভারতীয় রপ্তানিকারকদের রপ্তানি অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি। মূলত ইয়েমেন এবং ইরান থেকে কমদামে পেঁয়াজ পাওয়ায় তারা সেদিকে ঝুঁকেছে। অপরদিকে ফিলিপাইন চীনের পেঁয়াজ না পেলে ভারত থেকে পেঁয়াজ নেয়।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.