চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের তাই পো এলাকার বিশাল আবাসিক কমপ্লেক্সে ভয়াবহ আগুনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৮৩ জনে পৌঁছেছে। স্থানীয় সময় গতকাল রাত ৩টা (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা) পর্যন্ত এই সংখ্যা নিশ্চিত হয়। এখনও অন্তত ৩০০ জনের খোঁজ মেলেনি। বুধবার বিকালে লাগা আগুন একদিনের বেশি সময় পর নিয়ন্ত্রণে আসে, যা সরকারের সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ওয়াং ফুক কোর্ট নামের এই বিশাল কমপ্লেক্সে আটটি ব্লকের দুই হাজারের মতো ফ্ল্যাটে সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করত। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য, আগুন ছড়িয়ে পড়ে সাতটি ব্লকে। এতে আগুন নেভাতে ১ হাজার ২০০-এর বেশি কর্মী এবং তিন শতাধিক যান অংশ নেয়। গতকাল সব ব্লকের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ।
অগ্নিকাণ্ডে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিদেশি গৃহকর্মীরাও হতাহত হয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, দুই ইন্দোনেশীয় গৃহকর্মী মারা গেছেন এবং আরও দুইজন আহত।
আগুনের কারণ এখনো নির্ধারিত হয়নি, তবে ঘটনাস্থলের ছবিতে দেখা যায় সংস্কারকাজের জন্য ব্যবহৃত বাঁশের মাচা এবং সবুজ রঙের জাল আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে। কিছু মাচা জ্বলতে জ্বলতে নিচে ভেঙে পড়ে। এ ঘটনায় নির্মাণ সংস্থার অনিরাপদ উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ জানায়, কমপ্লেক্সের বিভিন্ন স্থানে জাল, প্লাস্টিক এবং জানালায় ফোম দিয়ে সিল করা হয়—এসব ক্ষেত্রে অগ্নিনিরাপত্তা বিধি মানা হয়েছিল কিনা তা তদন্ত চলছে। গুরুতর অবহেলার অভিযোগে নির্মাণ সংস্থার দুই পরিচালক ও একজন প্রকৌশল পরামর্শককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া পুলিশ নির্মাণ সংস্থার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দরপত্রের নথি, কর্মীদের তালিকা, ১৪টি কম্পিউটার ও তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে। সরকার নিশ্চিত করেছে যে, ওয়াং ফুক কোর্টের নিবন্ধিত ঠিকাদার হলো প্রেস্টিজ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তায় সরকার ৩০ কোটি হংকং ডলারের তহবিল গঠন করেছে এবং তাদের থাকার জন্য এক হাজার হোটেল কক্ষ দুই সপ্তাহের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে বাঁশের পরিবর্তে ধাতব মাচা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি বিবেচনার কথাও তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে অঞ্চলের বীমা খাতে। ওয়াং ফুক কোর্টের বীমাদাতা চায়না তাইপিং ইন্স্যুরেন্স–এর শেয়ার সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় ৮ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫–২৬ সাল পর্যন্ত ভবনের অগ্নিবীমা, রক্ষণাবেক্ষণের ঝুঁকি বীমা এবং কর্মীদের ক্ষতিপূরণ বীমার দায়িত্বে রয়েছে।
অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম এখনো চলছে এবং পুলিশ বলছে, অবহেলার কারণেই আগুন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এদিকে চীনের বিভিন্ন বড় কোম্পানি—গাড়ি নির্মাতা শাওমি, এক্সপেং, জিলি এবং আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মার দাতব্য সংস্থাগুলো—ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.