অস্ট্রেলিয়ার ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার নতুন সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছেন দুই কিশোর–কিশোরী। তাদের অভিযোগ, এই আইন অসাংবিধানিক এবং এর মাধ্যমে তাদের যোগাযোগের অধিকার হরণ করা হচ্ছে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর আওতায় মেটা, টিকটক ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে ১৬ বছরের কম বয়সী কেউ তাদের সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। সরকার ও সমর্থকরা বলছেন, ক্ষতিকর কনটেন্ট ও অ্যালগরিদম থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে এই পদক্ষেপ জরুরি।
তবে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন কিশোর নোয়া জোনস ও কিশোরী ম্যাসি নেল্যান্ড। একটি মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় আদালতে লড়ছেন তারা। তাদের যুক্তি, এই নিষেধাজ্ঞা শিশুদের অধিকারকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করার শামিল।
কিশোরী ম্যাসি নেল্যান্ড নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার পরিণতি ঠিক হবে না। এটা জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ উপন্যাসের মতো ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে।’
মামলা দায়েরের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই অস্ট্রেলিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী আনিকা ওয়েলস বলেন, ‘আমরা কোনো হুমকিতে ভয় পাব না। আইনি চ্যালেঞ্জ বা বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান—কেউই আমাদের দমাতে পারবে না। অস্ট্রেলিয়ার অভিভাবকদের স্বার্থে আমরা আমাদের অবস্থানে অনড় থাকব।’
বুধবার ‘ডিজিটাল ফ্রিডম প্রজেক্ট’ (ডিএফপি) নামের একটি সংগঠন হাইকোর্টে এই মামলাটি দায়ের করে। সংগঠনটির নেতৃত্বে আছেন নিউ সাউথ ওয়েলসের এমপি জন রুডিক।
সংগঠনটির দাবি, কিশোর-কিশোরীরা এখন তথ্য ও যোগাযোগের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এই নিষেধাজ্ঞা বিশেষ করে প্রতিবন্ধী, প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশু, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কিশোর-কিশোরীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
কিশোর নোয়া জোনস সরকারের এই নীতিকে ‘অলস’ বা দায়সারা বলে মন্তব্য করেছে। তার কথায়, ‘আমরা ডিজিটাল যুগের সন্তান। আমরা চাই এই জগত সম্পর্কে শিক্ষিত ও সচেতন থাকতে। সরকারের উচিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আমাদের চুপ করিয়ে দেওয়া নয়।’
সংগঠনটি বলছে, ঢালাও নিষেধাজ্ঞার বদলে ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো এবং বয়স উপযোগী নিরাপদ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত।
অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ইউটিউবের মালিকানা প্রতিষ্ঠান গুগলও এই আইনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ জানানোর কথা ভাবছে।
জরিপে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ অভিভাবক সরকারের এই নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করছেন। তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এতে শিশুরা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এর ফলে কিশোর-কিশোরীরা ইন্টারনেটের আরও অনিরাপদ ও নিয়ন্ত্রণহীন অংশের দিকে ঝুঁকতে পারে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.