অর্থবছরের মাঝামাঝি রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়াল সরকার

অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে সাধারণত লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলেও চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে উল্টো রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যমান ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন লক্ষ্যমাত্রা বিদ্যমান টার্গেটের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। আর গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে যা আদায় হয়েছে, তার তুলনায় এ বছর প্রায় ৪৯ শতাংশ বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে—যা বাস্তবে সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে এনবিআর তাদের অধীনস্থ অফিসগুলোকে বর্ধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায় বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘাটতি কমানো এবং বাড়তি ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে আয় বৃদ্ধি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন এ টার্গেটকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখছে এনবিআরও। এনবিআরের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় বাড়ানো চ্যালেঞ্জিং হবে, তবুও তারা অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তার ভাষায়, “অর্থনীতির অবস্থা এখনো ভালো হয়নি, ব্যাংকসহ বেশ কিছু খাতে সমস্যা রয়েছে।”

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাস—জুলাই থেকে অক্টোবর—রাজস্ব আদায় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশের কিছু কম হারে বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭,২১৯ কোটি টাকা। বিদ্যমান লক্ষ্যমাত্রা থেকেই যেখানে অনেক পিছিয়ে আছে এনবিআর, সেখানে অতিরিক্ত ৫৫ হাজার কোটি টাকা—অর্থাৎ প্রায় ৪৯ শতাংশ বাড়তি আদায়ের লক্ষ্য—অর্জনযোগ্য নয় বলে মনে করছেন সিপিডির রিসার্চ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, সরকারের সার্বিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় অনেক নিচে। আবার এই অর্থবছরেই নির্বাচন হবে। অর্থনীতিতেও তেমন কোনো ইতিবাচক উল্লম্ফন নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা কোন বিবেচনায় নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। আগের সরকার এভাবে বড় বড় লক্ষ্যমাত্রা দিতো এবং পরে তা অর্জন করতে পারতো না—এতে বাজেট ও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হয়। এ চক্র থেকে বের হয়ে আসা উচিত। আইএমএফের সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, সেটিও পরিষ্কার করা দরকার।

বাংলাদেশের গত আড়াই দশকের রাজস্ব আদায়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর ঘটনা এর আগে মাত্র একবার ঘটেছে। সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭–০৮ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি হয়েছিল—যা ছিল এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। অন্য বছরগুলোতে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা হয় মূল লক্ষ্যমাত্রার সমান রাখা হয়েছে, নয়তো কমানো হয়েছে। এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ।

২০০৭–০৮ অর্থবছরে এনবিআরের চেয়ারম্যান ছিলেন ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী রাজস্ব আদায় এখনও কম। ফলে আদায় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তার ভাষায়, বাংলাদেশের জিডিপিতে করের অবদান এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। যাদের কর দেওয়ার কথা, তাদের কাছ থেকে যথাযথভাবে কর আদায় করা গেলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.