দীর্ঘ কয়েক মাসের প্রকাশ্য বিরোধের পর শুক্রবার হোয়াইট হাউসে প্রথম সরাসরি বৈঠকে মিলিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি। অতীতে পারস্পরিক সমালোচনা সত্ত্বেও এবার ফলপ্রসূ ও আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার আশাবাদ জানিয়েছেন তারা।
গতকাল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) আলোচনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প মামদানির প্রশংসা করেন। অথচ এই মুসলিম রাজনীতিককে তিনি কখনো জিহাদিস্ট, কখনো কমিউনিস্ট বলে সমালোচনা করেছিলেন। একসময় মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলেরও হুমকি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট।
রিপাবলিকান ধনকুবের ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট সোশ্যালিস্ট তরুণ মামদানির রাজনৈতিক মতাদর্শ, শ্রেণি ও প্রজন্মগত পার্থক্য বহুদিনের। অভিবাসননীতি থেকে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি- প্রায় সব বিষয়েই বিরোধী অবস্থানে থাকলেও প্রথম বৈঠকে তাঁদের মধ্যে আশ্চর্য সখ্য দেখা যায়।
বৈঠকের একপর্যায়ে ৩৪ বছরের মামদানি যখন ৭৯ বছরের ট্রাম্পের টেবিলের পাশে গিয়ে দাঁড়ান, ট্রাম্প হাসিমুখে তাঁর হাত চাপড়ে দেন- যে ট্রাম্প কিছুদিন আগেই তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে বিদ্রূপ করেছিলেন।
ব্যক্তিগত বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও বেশি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।’ একই সুরে মামদানি জানান, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল নিউইয়র্কবাসীর সেবা করার সাধারণ লক্ষ্য।
বৈঠকের আগে ট্রাম্পের অস্বস্তিকর আচরণের আশঙ্কা থাকলেও তেমন কিছু ঘটেনি। বরং দুজনই দলীয় ভেদাভেদ পেছনে ফেলে ভবিষ্যতে বন্ধুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি (মামদানি) যত ভালো করবেন, আমি ততই খুশি হব।’
ট্রাম্পের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বরাবরই অভিবাসীদের অভ্যন্তরীণ হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করেছে এবং তিনি একসময় মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষেও ছিলেন।
অভিবাসন আইন প্রয়োগের মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধ নিয়ে জানতে চাইলে মামদানি বলেন, ভিন্নমত থাকলেও তিনি যৌথ লক্ষ্যগুলো সামনে রেখে একসঙ্গে কাজ করতে চান।
তিনি ২০২৪ সালের নভেম্বরে শেয়ার করা একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষে তিনি ট্রাম্পপন্থী ভোটারদের সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় ও যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি যুদ্ধগুলোতে জড়িত থাকার মতো বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন।
মামদানি জানান, এবার তিনি চান ট্রাম্পের সঙ্গে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধ করা এবং জীবনযাত্রার খরচ কমানোর মতো বিষয়গুলোতে মিলের জায়গা খুঁজে বের করতে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর আমি—আমরা দুজনই আমাদের অবস্থান নিয়ে খুবই স্পষ্ট। কিন্তু আমি যে বিষয়টির সত্যিই প্রশংসা করি, তা হলো—বৈঠকটি মতবিরোধের জায়গায় না গিয়ে বরং নিউইয়র্কবাসীদের সেবা করার যে যৌথ লক্ষ্য, সেটিকে কেন্দ্র করেই হয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এসব লক্ষ্য বাস্তবায়িত হলে ৮৫ লাখ মানুষের জীবন বদলে যেতে পারে।’ তাদের অনেকেই এখন জীবনযাত্রার খরচের তীব্র চাপে আছে, প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.