বাংলাদেশের স্টিল বিল্ডিং খাত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বাজার। তবে বিশাল এই বাজারটি কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল; যা এ খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা ও উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করছে। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় উৎপাদনের ওপর জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের বার্ষিক ২০ লাখ টন স্টিল বিল্ডিং নির্মাণের সক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকার কাঁচামাল আমরা আমদানি করি। এই বিশাল বাজার থেকে পুরো লাভ দেশেই রাখতে স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী মেটাল এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্টিল বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি মো. রাশেদ খান। কী-নোট স্পিকার হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্টিলমার্ক বিল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রেজওয়ানুল মামুন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির স্টিল বিল্ডিং নির্মাণশৈলী অনেক উন্নত এবং বৈচিত্র্যময়। এগুলো ডিজাইনেও খুবই অন্তর্ভুক্তিমূলক। এখানে শুধু একটি প্রধান সমস্যা হলো অগ্নি দুর্ঘটনা। তবে এখন আর সেটি চিন্তার বিষয় নয়। কারণ বর্তমানে অগ্নি প্রতিরোধের জন্য অনেক আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। এখন বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ সামগ্রী পাওয়া যায়, যেগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদেশ নির্ভরতা কেন—প্রশ্ন রেখে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমি যেটা জানলাম আপনাদের সক্ষমতা প্রায় দুই মিলিয়ন টন। আমি যদি ধরে নেই এক মিলিয়ন টন আপনারা ব্যবহার করেন, সেটাকে দুইশ টাকা করে কেজি ধরলেও প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা হয়। এই ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আপনারা ১৫–১৬ হাজার কোটি টাকা র-মেটেরিয়াল আমদানি করেন। তিন–চার হাজার কোটি টাকার অ্যাকচুয়াল ব্যবসা করেন। এই তিন–চার হাজার কোটি টাকার জন্য সবাই প্রতিযোগিতা করছেন। কেন আমরা বলছি না ১৫ হাজার কোটি টাকার স্টিল ইমপোর্ট হয়, এটা আমরা নিজেরা বানাব? আমাদের এই ২০ হাজার বা ৩০ হাজার কোটি টাকার যে শিল্পটা আছে, এটা থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে হবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আপনারা যেমন বলছেন সরকার বিদেশ থেকে কেন এই ধরনের কাঠামো আমদানি করছে, তেমনি আপনারাও কেন র-মেটেরিয়াল সবকিছুই আমদানি করছেন—দুজনই দুইজনকে প্রশ্ন করতে হবে। পদ্মা ব্রিজের মতো স্ট্রাকচার আপনারা বানাতে পারবেন না—এটা আমি বিশ্বাস করি না। কেন পারবেন না? এটা কি এমন জটিল কাজ? আমি আশা করি সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এক হয়ে কাজ করলে সম্ভব। আপনাদের (ব্যবসায়ী–উদ্যোক্তাদের) প্রয়োজনগুলো অফিসিয়ালি জানাবেন। আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
সভাপতির বক্তব্যে স্টিল বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি মো. রাশেদ খান বলেন, এই খাত নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তারপরও এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পণ্য ও প্রযুক্তি যে প্রদর্শনী হচ্ছে, এর ভূমিকা ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিন দিনব্যাপী এই মেটাল এক্সপো আগামী শনিবার (২২ নভেম্বর) শেষ হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.