‘পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা জরুরি’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমাদের দেশে পুঁজিবাজারের সমস্যাকালীন দরজা-জানালা বন্ধ হয়ে যেতে দেখা যায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের হাতেও রুলসের জন্য অনেক সময় কিছু করার থাকে না। সেজন্য রুলস করার আগেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা উচিত।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ) রুলস, ২০২৫’ শীর্ষক বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডিএসই চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক সমস্যা আছে, যে কারণে ভালো ভালো কোম্পানিগুলো এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি। এ সমস্যাগুলো দূর করতে রুলস হওয়ার আগেই সমাধান খুঁজতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) প্রতিনিধি ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।

মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের মার্কেটের পরিধি বাড়াতে ভালো ও নতুন নতুন প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনতে হবে।

তিনি বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়ানোতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এই জায়গায় কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাই ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার মতো করেই রুলস তৈরি করতে হবে।

অনুষ্ঠানে এক অংশে একীভূত হতে চলা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, শরিয়াহভিত্তিক এই পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ কারা হচ্ছে। যাতে বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়; তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, “পাঁচ ব্যাংকের আজকের অবস্থার জন্য সব রেগুলেটর (বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসইসি), নিরীক্ষকসহ সকলের ফল (ব্যর্থতা) ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু বিশেষ ক্ষমতা বলে আমানতকারীদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে।”

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা ভয়েস রেইজ করছি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায়। পাঁচ ব্যাংক নিয়ে যা হয়েছে তা অতীতে হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে না হয় এজন্য ডিএসই কাজ করছে। একটি বিশেষ অবস্থায় দেশ চলছে, তাই সরকার মার্জারে গেছে। তারপরও আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করা হচ্ছে।”

এসময় ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরাই প্রথম সরকার পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারের সংস্কারের জন্য বলেছিলাম। সংস্কার মানেই অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান বের করা।

“আজকের আলোচনায় যে মতামতগুলো এলে, তা বিএসইসি বিবেচনায় নেবে। চূড়ান্ত আলোচনা করতে পুনরায় আমাদের সঙ্গে বসে বিনিয়োগকারীবান্ধব আইপিও নীতিমালা করার অনুরোধ করছি।”

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উদ্দেশে তিনি বলেন, “আইপিওর (প্রাথমিক গণ প্রস্তাব) মাধ্যমে কোম্পানি বাজারে আনতে ডিএসইকে সঙ্গে নিয়ে করা। শুধু আর্থিক প্রতিবেদন বিনিয়োগকারীদের কাছে উপস্থাপন করলেই হবে না, রেগুলেটরকে (নিয়ন্ত্রক সংস্থা) দেখতে হবে তা যথাযথভাবে হল কি না।”

ডিবিএর সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, আইপিওতে বিনিয়োগে ৫০ হাজার টাকার শেয়ার থাকার যে বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ অন্যায়। আইপিও মানে পাবলিক অফারিং, যা সধারণ বিনিয়োগারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আগে আমরা দেখতাম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাজারে বিনিয়োগ করছে। এখন তা আর দেখা যায়না এই শর্তের ফলে।

পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি গোলাম সামদানি বলেন, পুঁজিবাজারে আইপিও আসতে নানা জটিলতায় পরতে হয়। ২ বছরে তাই নতুন কোন আইপিও আসেনি বাজারে। তাই আইপিও কেন্দ্রিক জটিলতা কমাতে হবে।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.