জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে। এর এক দিন পর মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা অঞ্চল থেকে হামাসকে বহিষ্কারের আহ্বান জানান। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাব রয়েছে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হোয়াইট হাউজ সফরে নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে এ পরিকল্পনার সমর্থন করেছিলেন। তবে তার সাম্প্রতিক মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অগ্রগতির পথ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। হামাসও পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
কূটনীতিকরা ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন, ইসরায়েল ও হামাস— দুই পক্ষেরই অটল অবস্থান পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, বিশেষ করে এতে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা বা প্রয়োগ ব্যবস্থা নেই। তবু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিকল্পনাটি শক্ত সমর্থন পেয়েছে।
মঙ্গলবার নেতানিয়াহু জাতিসংঘের ভোটকে কেন্দ্র করে এক্সে একাধিক পোস্ট করেন। এক পোস্টে তিনি ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানান। আরেক পোস্টে লেখেন, পরিকল্পনাটি শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। কারণ এটি গাজার ‘সম্পূর্ণ সামরিকীকরণহীনতা, নিরস্ত্রীকরণ ও চরমপন্থা দূরীকরণ’-এর কথা বলে।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল আমাদের সব প্রতিবেশীর প্রতি শান্তি ও সমৃদ্ধির হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘হামাস ও তাদের সমর্থকদের অঞ্চল থেকে বহিষ্কারে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে।’
এক প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহুর মুখপাত্র বলেন, “হামাসকে বহিষ্কার বলতে বোঝানো হয়েছে—পরিকল্পনার ২০ দফায় যেভাবে বলা হয়েছে, গাজায় হামাসের সামরিক বা শাসনক্ষমতা থাকবে না এবং তারা ফিলিস্তিনি জনগণকে শাসন করতে পারবে না।”
ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় বলা আছে—যেসব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সম্মত হবে এবং অস্ত্র সমর্পণ করবে, তাদের ক্ষমা করা হবে। যারা গাজা ছাড়তে চাইবে, তাদের তৃতীয় দেশে নিরাপদ পথ দেওয়া হবে।
আরেকটি দফায় বলা হয়, হামাস গাজা শাসনে কোনও ভূমিকা রাখবে না। তবে গোষ্ঠীটিকে ভেঙে দেওয়া বা গাজা ছাড়ার বিষয়ে কোনও সরাসরি শর্ত নেই।
পরিকল্পনায় আরও বলা আছে, পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার ফিলিস্তিনিদের ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের বাস্তবসম্মত পথ’ তৈরি করতে পারে।
জাতিসংঘে ভোটের আগেই নেতানিয়াহু জানান, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা বজায় রেখেছে— ডানপন্থি জোটসঙ্গীদের প্রতিবাদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত বিবৃতিতে স্বাধীন ফিলিস্তিনের পথনকশার ইঙ্গিতের পর।
নেতানিয়াহু গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনও সম্পৃক্ততাও চান না।
নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে একটি বহুজাতিক বাহিনী গাজায় অস্থায়ীভাবে মোতায়েনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে—যা ট্রাম্পের পরিকল্পনায় উল্লেখ ছিল। প্রস্তাবের ভাষায় বলা হয়েছে, সদস্য রাষ্ট্রগুলো ‘বোর্ড অব পিস’–এ যোগ দিতে পারবে, যা গাজায় পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার তদারকি করবে।
হামাস এ প্রস্তাবকে সমালোচনা করে বলেছে, এটি ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক ও মানবিক অধিকার পূরণ করতে ব্যর্থ এবং গাজার ওপর কোনও আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্বও জনগণ গ্রহণ করবে না।
হামাস জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাহিনী কেবল সীমান্তে মোতায়েন হয়ে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং এটি অবশ্যই জাতিসংঘ পর্যবেক্ষণে হতে হবে। গোষ্ঠীটি সতর্ক করে দিয়েছে— যদি ওই বাহিনী হামাসকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করে, তাহলে তারা নিরপেক্ষতা হারাবে।
গাজার ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক রহম অওদা বলেন, হামাসের বিবৃতিটি পুরো পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান নয়— বরং আন্তর্জাতিক বাহিনী ও বোর্ড অব পিসের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে একটি আপত্তি।
ট্রাম্পের বহু-পর্যায় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১০ অক্টোবর ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ইসরায়েল আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার করেছে, তবে এখনও গাজার ৫৩ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুই পক্ষই একে অপরকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করছে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.