দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপে আইএমএফ সন্তুষ্ট: অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলোতে সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আইএমএফ বলেছে পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে ভালো, তবে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছি, কিন্তু তারা মনে করে কিছু পদক্ষেপ যদি আরও দ্রুত নেওয়া যায়, তাহলে ফল আরও ভালো হবে।’

মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির দুইটি পৃথক সভার পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আইএমএফ বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ‘সাধারণভাবে ইতিবাচক’ মনে করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। বিশেষ করে নীতি বাস্তবায়নের গতি এবং সুদের হার সমন্বয় নিয়ে আইএমএফ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

উপদেষ্টা বলেন, পলিসি রেট হঠাৎ করে বাড়ানো যায় না, এটা সবাই জানে। একই সঙ্গে আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। আইএমএফ ব্যাংকিং খাত সম্পর্কিত বিষয়ও উত্থাপন করেছে। তারা পাঁচটি ব্যাংককে পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়েছে, যা তারা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। আর্থিক শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সরকারকে কঠোর সংস্কার হাতে নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজস্ব প্রশাসন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বর্তমান অগ্রগতিতে আইএমএফ সন্তুষ্ট, তবে ধারাবাহিক সংস্কারের প্রত্যাশা করছে তারা। তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়াটি নিয়মানুযায়ী হয়েছে, তবে জনবল পুনর্গঠন ও সক্ষমতা বাড়াতে সময় লাগবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যে পুরোপুরি পরিবর্তন সাধন সম্ভব না হলেও উল্লেখযোগ্য ভিত্তিগত কাজ ও কাঠামোগত প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। আমরা হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব না, কিন্তু যৌক্তিক কাঠামো ও প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হবে।’

আইএমএফ কোনো নতুন শর্ত দিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন জানান, কোনো নতুন শর্ত আরোপ করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল মূলত পরামর্শমূলক আলোচনা। আমরা এখন পর্যন্ত যে পদক্ষেপ নিয়েছি তাতে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আর্থিক পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে এবং বাকি সময়টা সুসংহত করার জন্য ব্যবহার করা হবে।’

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে অনুমোদিত ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার করা, রাজস্ব সংস্কার শক্তিশালী করা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কিস্তি ছাড় হয়েছে, আর পরবর্তী কিস্তি নীতিগত কর্মক্ষমতার মানদণ্ড ও কাঠামোগত সংস্কারের ওপর নির্ভর করছে।

গত ২৩ জুন আইএমএফ চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলিয়ে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের অনুমোদন দেয়, যার ফলে মোট ছাড়কৃত অর্থ দাঁড়ায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের জুন মাসে আইএমএফ মোট ঋণের পরিমাণ ৪.৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হওয়া এ ঋণ কর্মসূচি মূলত বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি (ব্যালান্স অব পেমেন্টস) মোকাবিলার জন্য গ্রহণ করা হয়। বাসস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.