এলডিসি উত্তরণের আগে ৪ সমস্যার সমাধান চান পোশাক খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের আগে চার সমস্যার সমাধান চান পোশাক খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। এগুলো হলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ব্যাংকের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনা, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করা ও জ্বালানি সমস্যার সমাধান। রাজধানীর উত্তরা ক্লাবে গতকাল ‘ব্যবসায় সংকট ও রফতানির নিম্নমুখী ধারা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারে প্রতি আহ্বান জানান তারা।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের বর্তমান সভাপতি মাহমুদ হাসান খান ও সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান। এছাড়া আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সভাপতি মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন পাভেল, বিজিএমইএর সহসভাপতি মিজানুর রহমান, সাবেক সহসভাপতি শোভন আহমেদ ও সদস্য মো. কফিল উদ্দিন, চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম, বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) পরিচালক বেলায়েত হোসেন এবং উত্তরা ক্লাবের সভাপতি মো. ফয়সাল তাহের।

সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, তিন মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নিম্নমুখী ধারা চলছে, যা আরো কয়েক মাস অব্যাহত থাকবে। ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা আরো খারাপ হবে। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘সরকার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে, অথচ আমরা এখনো প্রস্তুত নই। বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েশন পর্বে টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহযোগিতামূলক, পূর্বাভাসযোগ্য ও স্থিতিশীল নীতিগত পরিবেশ অপরিহার্য।’

তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ব্যাংকের সুদ এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনুন অথবা লো কস্ট ফাইন্যান্স দিন। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে ঠিক করে দিন, যেন ৪ ঘণ্টায় যাওয়া যায়। এতে দৈনিক দুবার শিপমেন্ট দেয়ার সুযোগ হবে। এছাড়া এনার্জি ইস্যুর সমাধান ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে দিন। এ চারটি সমস্যার সমাধান করে দিন, কালই এলডিসি গ্র্যাজুয়েট হয়ে যান। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, চাইলেই সহসা এসব সমস্যার সমাধান হবে না।’

বিজিএমইএর সভাপতি আরো বলেন, ‘সরকারে যারা থাকেন বা থাকবেন, তাদের সঙ্গে যদি আমাদের ইন্টারেকশন না হয়, তারা যদি আমাদের সমস্যা না বোঝেন, তাহলে কখনই এসব সমস্যার সমাধান হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার, এ সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলে খুব একটা লাভ হবে না। আমি মনে করি, একটি ভালো নির্বাচন করা এ সরকারের এখন প্রধান দায়িত্ব। এর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ভালো থাকে, সরকারের সেদিকে নজর দেয়া দরকার।’

মাহমুদ হাসান খান আরো বলেন, ‘আগামী সংসদে নিম্ন ও উচ্চকক্ষ থাকবে। আমাদের দাবি, উচ্চকক্ষে যে ১০০ আসন থাকবে, সেখানে অন্তত ১০ জন শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীকে সুযোগ দেয়া হোক। আমরা যদি এ ধরনের প্রতিনিধি পাঠাতে পারি, তাহলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে।’

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশ ভারত তার শিল্প মালিকদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, যা আমার শিল্পের জন্য ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করবে। বর্তমান সরকার ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু সেই টাকা কই গেল, ব্যাংক তো আমাদের টাকা দিচ্ছে না।’

বিজিবিএ সভাপতি মোহাম্মদ পাভেল বলেন, ‘পোশাক খাতের সংকটের শেষ নেই, নিরাপত্তা, পলিসি সবকিছুতেই সংকট। এর সমাধানের জন্য সবাই মিলে রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে, তবে শুধু আমলারা এটা করলে হবে না।’

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.