গাজার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। সোমবার (১৭ নভেম্বর) গ্রহণ করা এ প্রস্তাবে গাজা উপত্যকার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে—বহু নাম না-জানা দেশ এই বাহিনীতে অবদান রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
প্রস্তাবটি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোমালিয়া সহ ১৩টি দেশ সমর্থন করেছে—এবং কোনও দেশই বিপক্ষে ভোট দেয়নি। রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত থাকে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেছেন, এটি যুদ্ধবিরতি দৃঢ় করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে হামাস প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও দাবি পূরণ করে না।
প্রস্তাব গ্রহণের পর টেলিগ্রামে দেওয়া বার্তায় হামাস বলেছে, পরিকল্পনাটি গাজা উপত্যকার ওপর আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে, যা আমাদের জনগণ ও প্রতিরোধ আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করে।
হামাস আরও বলেছে, আন্তর্জাতিক বাহিনীকে গাজায় দায়িত্ব দেওয়া—বিশেষ করে প্রতিরোধ বাহিনীকে নিরস্ত্র করার মতো ভূমিকা—তাদের নিরপেক্ষতা নষ্ট করে এবং দখলদারদের পক্ষ নেওয়ার মতো পক্ষপাতমূলক অবস্থানে দাঁড় করায়।
প্রস্তাব অনুযায়ী, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হামাসসহ সব অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে নিরস্ত্র করার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য আইএসএফ ইসরায়েল, মিসর এবং নতুনভাবে প্রশিক্ষিত ও যাচাইকৃত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে।
এখন পর্যন্ত গাজায় পুলিশ বাহিনী হামাসের কর্তৃত্বের অধীনেই পরিচালিত হতো।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ পরিষদকে বলেন, আইএসএফ-এর দায়িত্ব হবে এলাকা সুরক্ষিত করা, গাজাকে নিরস্ত্রীকরণে সহায়তা করা, সন্ত্রাসী অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া, অস্ত্র অপসারণ এবং ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
নিরাপত্তা পরিষদ আরও একটি অন্তর্বর্তীকালীন শাসন কাঠামো গঠনের অনুমোদন দিয়েছে, যার নাম বোর্ড অফ পিস (বিওপি)। এই সংস্থা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির তত্ত্বাবধান করবে এবং গাজার পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
গাজা পুনর্গঠনের অর্থায়ন বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গঠিত একটি ট্রাস্ট ফান্ড থেকে আসবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ আছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, আইএসএফ ও বিওপি দুটিই ফিলিস্তিনি কমিটি এবং পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।
ট্রাম্প নিরাপত্তা পরিষদের ভোটকে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন এটি বিওপিকে স্বীকৃতি ও অনুমোদন দেওয়ার একটি পথ। বোর্ডের চূড়ান্ত সদস্যদের নাম শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
তিনি নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, “এটি জাতিসংঘের ইতিহাসে অন্যতম বড় অনুমোদন হিসেবে বিবেচিত হবে, সারা বিশ্বে আরও শান্তির পথ খুলে দেবে এবং সত্যিকার অর্থে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত!”
আগের খসড়া থেকে ভিন্নভাবে, এই প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিশ্বাসযোগ্য পথের উল্লেখ রয়েছে—যা পরিষদের কয়েক সদস্য জোর দিয়ে দাবি করেছিলেন।
ইসরায়েল একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কঠোর বিরোধী, যা ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা। আরব দেশগুলোর চাপেই আত্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এনে প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন, প্রস্তাবটি অবশ্যই স্থলে দ্রুত বাস্তবায়নে রূপ নিতে হবে এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) এবং মিসর, সৌদি আরব, তুরকি সহ কয়েকটি আরব ও মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ দ্রুত প্রস্তাবটি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিল।
পিএ এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রস্তাবের শর্তগুলো তাৎক্ষণিকভাবে এবং জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে।
রাশিয়া ও চীন ভেটো প্রয়োগ না করলেও তারা বিরত থেকে প্রস্তাবটি পাস হতে দিয়েছে—মূলত পিএ এবং আরও আটটি আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রের সমর্থনের কারণে।
তবে মস্কো ও বেইজিং প্রস্তাবটির সমালোচনা করেছে। তাদের অভিযোগ—মূল কাঠামোগুলোর গঠন সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য নেই, জাতিসংঘের অংশগ্রহণ নিশ্চিত নয়, এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিও স্পষ্টভাবে পুনর্ব্যক্ত করা হয়নি।
পরিকল্পনার প্রাথমিক ধাপ—ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি ও আটক ব্যক্তিদের হস্তান্তর—১০ অক্টোবর কার্যকর হয়।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.