জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আজ রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৩ অক্টোবর বিচারকাজ শেষ হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার বলেন, রায় ঘোষণা হবে খুব শিগগিরই। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। ১২ অক্টোবর থেকে টানা পাঁচ দিন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রোসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ২০ অক্টোবর থেকে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়, যা ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলে। রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। চূড়ান্ত যুক্তিতর্কে চিফ প্রোসিকিউটর শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন, অন্যদিকে আসামিপক্ষ দাবি করে তাঁরা নির্দোষ।
রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও আইনজীবী সমিতি ভবনে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের চিঠি অনুযায়ী সেনাবাহিনী ট্রাইব্যুনাল ও আদালত এলাকায় নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করে। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয় এবং গত ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়। তদন্ত ছয় মাস ২৮ দিনে শেষ করে ১২ মে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। পলাতক অবস্থায় থাকা শেখ হাসিনা ও কামালকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলেও তারা সাড়া দেননি। ১০ জুলাই তাঁদের পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল এবং রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
৩ আগস্ট চিফ প্রোসিকিউটরের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যার মধ্যে সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান ও এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও ছিলেন। রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন আসামি ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ের আটটি মামলার মধ্যে এটি প্রথম রায় ঘোষণার পর্যায়ে এসেছে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, রায় ঘোষণা হবে খুব শিগগিরই।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.