স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ওইদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, এখানে বড় ধরনের আলোচনা হয়েছে, যে বিষয়ে আপনাদের একটু সহযোগিতা দরকার। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো। ১৩ নভেম্বর নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এরা একটা শক্ত অবস্থানে থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। কোনো আশঙ্কা এখানে নেই। আর সন্ত্রাসীদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। আপনারা অনেক সময় বলেন সন্ত্রাসীরা খুব তাড়াতাড়ি জামিন পেয়ে যায়, সহজে যেন জামিন না পায় এজন্য আমরা তাদেরও অনুরোধ করবো, যারা জামিন দেয় তারা যেন সন্ত্রাসীদের জামিন না দেয়।
আগামী ১৩ নভেম্বর ঘিরে বিশেষ কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, শক্ত অবস্থানের জন্য আপনারা দেখেছেন আমাদের টহল বাড়ানো হয়েছে। কেপিআই-গুলোর (গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাস্তায় তেল বিক্রি করা বন্ধ করা হয়েছে। (নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য) বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যাপারে আলাপ হয়েছে, কাল বা পরশুর মধ্যে হয়তো ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে।
অনেক সন্ত্রাসী জেল থেকে বের হয়েছে, তারা এই সময় সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে কি না- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘সন্ত্রাসী যারা জেল থেকে বের হচ্ছে, তারা অন্য ধরনের কোন কর্মকাণ্ড করলে তাদের আবার আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে।’ পুরান ঢাকায় গুলি করে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের খুব তাড়াতাড়ি আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি মোটামুটি ভালোই সন্তোষজনক। সব বাহিনীগুলো তাদের প্রশিক্ষণ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আমরা হয়তো দু-একটা রিহার্সেলও দিব। নির্বাচনের দায়িত্বে পুলিশ প্রায় দেড় লাখ সেনাবাহিনী এক লাখের মতো, বিজিবি ৩৫ হাজার, সাড়ে পাঁচ লাখের মতো আনসার, নৌবাহিনীর সদস্য সাড়ে চার হাজার, কোস্টগার্ড চার হাজারের মতো থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলমান আছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এটাকে আরও বেগবান করা হবে। যেহেতু কিছু কিছু অস্ত্র এখনো রয়ে গেছে বাইরে, এগুলো যাতে খুব তাড়াতাড়ি উদ্ধার করতে পারি, সেজন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের দিক থেকে ইয়াবা আসা একটু কমেছে দাবি করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তারপর আমি বলব মাদক প্রতিরোধ অতটা আশাব্যঞ্জন নয়। গ্রামে-গঞ্জেও এই জিনিসটি ছড়িয়ে পড়েছে। মাদক সমাজ থেকে দূর করা আমাদের সবার দায়িত্ব। রাস্তার পাশে তেল বিক্রি কিছুদিন বন্ধ থাকবে। এই তেল দিয়েও অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের অঘটন ঘটিয়ে ফেলায়। কেপিআইগুলোতে (গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল, মেট্রো রেল এলাকা ,ট্রাইব্যুনাল এসব এলাকায়।
নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসীরা যাতে দেশে ঢুকতে না পারে, সেই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যেই সীমান্তরক্ষা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোন সন্ত্রাসী যাতে দেশে সন্ত্রাস করতে না পারে, বাইর থেকেও যাতে না আসতে পারে।
বিমানবন্দর থেকে অস্ত্র খোয়া যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটা তদন্ত কমিটি আছে। তদন্তের পরে আমরা বলতে পারব সেখানে কী হয়েছে। এর আগে আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
সন্দেহভাজনদের আপনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে বলেছেন, এতে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়বে কি না- জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আপনার ছেলেও যদি একটু দুষ্টামি করে আপনি তারে শাসন করেন না? শাসন করতে গেলে কি সমাজে অস্থিরতা বেড়ে গেল? আপনার কাছে যদি সন্দেহভাজন মনে হয়, কেউ যদি দুষ্কৃতিকারী হয় তাকে আপনি ধরবেন। সাধারণ মানুষ জানে না কে সমাজের মধ্যে ঝামেলা করতেছে।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.