শুল্কবিরোধীরা মূর্খ, ধনীরা বাদে প্রত্যেক আমেরিকান পাবেন ২ হাজার ডলার: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও তাঁর শুল্ক আরোপের নীতির পক্ষে সাফাই গাইলেন। দাবি করলেন, এই কঠোর শুল্ক আরোপের ফলেই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ‘সবচেয়ে ধনী’ এবং ‘সবচেয়ে সম্মানিত’ দেশে পরিণত হয়েছে।

বিরোধীদের ‘মূর্খ’ আখ্যা দিয়ে প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ধনী ব্যক্তিরা ছাড়া প্রত্যেক মার্কিন নাগরিক শিগগিরই তাঁর প্রশাসনের সংগৃহীত শুল্ক রাজস্ব থেকে কমপক্ষে ২ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা) করে পাবেন।

সোমবার (১০ নভেম্বর) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন কয়েক দিন আগেই মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্কনীতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই মামলার ফলাফল বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি ট্রাম্পের ক্ষমতাকে এক বড় পরীক্ষায় ফেলতে পারে।

কী বললেন ট্রাম্প
ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘যারা শুল্কের বিপক্ষে তারা মূর্খ। আমরা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী, সবচেয়ে সম্মানিত দেশ, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় নেই। পুঁজিবাজারের মূল্য রেকর্ড পর্যায়ে। ৪০১কে’এস সর্বোচ্চ। আমরা লাখ লাখ ডলার নিচ্ছি এবং খুব শিগগির আমাদের বিশাল ঋণ ৩৭ লাখ কোটি ডলার পরিশোধ শুরু করব।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে, সর্বত্র নতুন নতুন প্ল্যান্ট ও কারখানা তৈরি হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে (উচ্চ আয়ের মানুষ বাদে) কমপক্ষে ২ হাজার ডলার লভ্যাংশ দেওয়া হবে।’

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, তাঁর শুল্কনীতির কারণে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু শুল্কের কারণেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ভিড় করছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর এমন কাজের ন্যায্যতা প্রমাণেরও চেষ্টা করেন। পাশাপাশি তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

ট্রাম্প লিখেছেন, ‘তাহলে আসুন ব্যাপারটা পরিষ্কার করা যাক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একটি দেশের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করার (যা শুল্কের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর) এবং একটি দেশকে লাইসেন্স দেওয়ার অনুমতি দেওয়া আছে (যা কংগ্রেসের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে অনুমোদিত)। অথচ জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে একটি দেশের ওপর প্রেসিডেন্টের সাধারণ শুল্ক আরোপের অনুমতি দেওয়া হয়নি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লিখেছেন, ‘আমাদের মহান প্রতিষ্ঠাতাদের মনে এমনটা ছিল না। পুরো বিষয়ই হাস্যকর। অন্যান্য দেশ আমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে। কিন্তু আমরা তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারি না। এটি তাদের স্বপ্ন। শুধু শুল্কের কারণেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রে আসছে।’ তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টকে কি এটা জানানো হয়নি? কী হচ্ছে এসব?’

ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট
গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের রক্ষণশীল ও উদারপন্থী বিচারপতিরা ট্রাম্পের প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীকে তীব্রভাবে প্রশ্ন করে জানতে চান, জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় ব্যবহারের জন্য তৈরি করা ১৯৭৭ সালের আইনের অধীন শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের ক্ষমতাকে অতিক্রম করেছেন কি না।

বিচারপতিদের এ প্রশ্নের পর ট্রাম্প এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

তবে কিছু রক্ষণশীল বিচারপতিও ইঙ্গিত দেন, তাঁরা অন্য দেশের সঙ্গে লেনদেনে প্রেসিডেন্টের অন্তর্নিহিত ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথাও ভাবছেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মামলার ফলাফলে আদালত তীব্রভাবে বিভক্ত হতে পারে। আদালতে ৬-৩ ব্যবধানে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

শুনানি চলাকালে বিচারপতিরা মার্কিন সলিসিটর জেনারেল ডি জন সাউয়ারকে প্রশ্ন করেন, সময়সীমা ছাড়া শুল্ক আরোপে ট্রাম্পের এই আইনের প্রয়োগ নির্বাহী বিভাগের বড় কোনো পদক্ষেপ ছিল কি না। এর জন্য কংগ্রেসের স্পষ্ট অনুমোদন প্রয়োজন কি না।

এই শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প আইনের নির্দিষ্ট ক্ষমতাকে অতিক্রম করেছেন বলে নিম্ন আদালত রায় দেন। এরপরই প্রশাসনের আপিলের ভিত্তিতে এই বিতর্ক শুরু হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী এবং ১২টি রাজ্য এই শুল্ককে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। এসব রাজ্যের বেশির ভাগই ডেমোক্র্যাট–শাসিত।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.