শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে ৩৩০০ ফ্লাইট বাতিল

সরকারি অচলাবস্থা বা শাটডাউনের কারণে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার সম্মুখিন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজ চলাচলে। ফেডারেল সরকারের শাটডাউনের কারণে দেশটির বিভিন্ন এয়ারলাইনস একদিনে ৩ হাজার ৩০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। খবর আল-জাজিরা

এক শীর্ষ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে “বিমান চলাচল প্রায় বন্ধের পর্যায়ে নেমে আসতে পারে।”

স্থানীয় সময় গতকাল রবিবার এসব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। ঠিক সেই সময়ই তহবিল বিল পাস নিয়ে ৪০ দিন ধরে চলা অচলাবস্থার অবসানে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা সরকার পুনরায় চালুর লক্ষ্যে অস্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছায়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ক্লান্ত ও অনুপস্থিত কর্মীদের কারণে ফ্লাইট সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। অনেক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার অতিরিক্ত কাজের চাপ ও বেতন না পাওয়ায় কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।

মোট ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে “অপরিহার্য কর্মী” হিসেবে গণ্য করা হয়। সরকারের শাটডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ ১ অক্টোবর থেকে তারা বিনা বেতনে কাজ করছেন। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার জানিয়েছে, শুধু রবিবারই যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ৩০৪টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে এবং ১০ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। এর আগে শনিবার বাতিল হয়েছিল ১ হাজার ৫০০-এর বেশি, শুক্রবার প্রায় ১ হাজার ফ্লাইট।

এফএএ-এর ধাপে ধাপে ফ্লাইট কমানোর নির্দেশনা অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ৪ শতাংশ কমানো হয়। সোমবার তা ৬ শতাংশে, বৃহস্পতিবার ৮ শতাংশে, আর শুক্রবার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি সতর্ক করেন, থ্যাঙ্কসগিভিং ছুটির আগে বিমান চলাচল একেবারেই স্থবির হয়ে যেতে পারে। তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, “থ্যাঙ্কসগিভিং ঘনিয়ে এলে সবাই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ভ্রমণে বের হবে। তখন বিমান চলাচল প্রায় থেমে যাবে।” ডাফি আরও বলেন, “পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না। যত দিন পর্যন্ত বিমান নিয়ন্ত্রকদের বেতন দেওয়া না হয়, তত দিন এটি আরও খারাপ হবে।”

থ্যাঙ্কসগিভিং যুক্তরাষ্ট্রে বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত ভ্রমণ মৌসুমগুলোর একটি। ২০২৪ সালে এই সময় প্রায় ৮ কোটি মানুষ ভ্রমণ করেছিলেন। শুধু ছুটির পরের রোববারেই বিমানবন্দরে প্রায় ৩১ লাখ যাত্রী চলাচল করেছিলেন, যা ছিল রেকর্ড।

এদিকে, মার্কিন সিনেটররা জানিয়েছেন, তারা সরকার পরিচালনায় অর্থায়ন পুনরায় চালু করার বিষয়ে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এমন এক অন্তর্বর্তী চুক্তিতে পৌঁছেছেন। রোববার রাতে সিনেট সেই বিলের প্রাথমিক ভোটাভুটি শুরু করে। কয়েকজন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট জানান, তারা রিপাবলিকানদের সঙ্গে ভোট দিয়ে সরকার পুনরায় চালুর পক্ষে যাবেন।

তবে এই বিল কার্যকর করতে হলে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে তা পাস হতে হবে এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষর লাগবে। তাহলেই সরকার বন্ধের অবসান ঘটবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—সরকার খুললেও বিমান চলাচল কত দ্রুত স্বাভাবিক হবে।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.