সমাজে অর্ধেক নারী: ব্যবসায় তাদের অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত

অর্ধেক নারী মানেই অর্ধেক সম্ভাবনা নয়— বরং পূর্ণাঙ্গ অগ্রগতির অনিবার্য শর্ত

বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোতে নারীরা জনসংখ্যার অর্ধেক। অর্থাৎ, দেশের সম্ভাবনার অর্ধেক অংশীদার তারা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নারীরা গৃহকেন্দ্রিক ভূমিকায় সীমাবদ্ধ ছিলেন। এখন সময় পাল্টেছে। শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ফলে আজ নারীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রভাগে উঠে এসেছেন। এই পরিবর্তন শুধু নারী উন্নয়নের নয়— এটি অর্থনৈতিক অগ্রগতিরও এক বিশাল পদক্ষেপ।

নারী উদ্যোক্তা: সম্ভাবনা থেকে প্রভাব
নারী উদ্যোক্তারা কেবল একটি ব্যবসা গড়ে তুলছেন না; তাঁরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন, স্থানীয় অর্থনীতিকে সক্রিয় করছেন, এবং পরিবারের আর্থিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১০ লক্ষাধিক নারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁরা কৃষি, পোশাক, হস্তশিল্প, ই-কমার্স, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে প্রযুক্তি—সব ক্ষেত্রেই নিজেদের সক্ষমতার ছাপ রেখেছেন।

অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের ইতিবাচক প্রভাব
বিশ্বব্যাংকের মতে, যদি নারী শ্রমবাজারে পুরুষদের সমান অংশগ্রহণ করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের জিডিপি কমপক্ষে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লে— পরিবারে আয় ও জীবনমান উন্নত হয়; শিশুদের শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায়; পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে; স্থানীয় বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়ে, ফলে সামগ্রিক অর্থনীতি চাঙ্গা হয়।

প্রতিবন্ধকতা এখনো আছে
তবু নারী উদ্যোক্তাদের পথ সহজ নয়। পুঁজি সংকট, সামাজিক রীতিনীতির বাঁধা, বাজারে প্রবেশের সীমাবদ্ধতা, এবং পরিবারে কাজের দ্বৈত চাপ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
অনেক নারী উদ্যোক্তা নিজের পরিশ্রম ও প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও বাজার সংযোগের অভাবে পিছিয়ে পড়েন।

পরিবর্তনের চাবিকাঠি: সহায়ক পরিবেশ
নারীদের জন্য ব্যবসা সহজ করতে হলে— ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দিতে হবে; নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে; প্রযুক্তি ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীদের প্রবেশ বাড়াতে হবে; সামাজিক মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে নারী নেতৃত্বকে স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

নারী নেতৃত্ব: প্রগতির প্রতীক
যখন একজন নারী ব্যবসায় এগিয়ে আসেন, তখন তিনি শুধু নিজের জন্য নয়, একটি প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেন। তাঁর সাহস ও সাফল্য অন্য নারীদের অনুপ্রাণিত করে, সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এক নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে। শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য কিংবা প্রযুক্তি—সবখানেই নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। এই অংশগ্রহণ কেবল সংখ্যা নয়; এটি উন্নয়ন, সমতা ও স্থিতিশীলতার প্রতীক।

শেষ কথা
অর্ধেক নারী মানেই অর্ধেক সম্ভাবনা নয়— বরং পূর্ণাঙ্গ অগ্রগতির অনিবার্য শর্ত। নারী উদ্যোক্তাদের পথ মসৃণ হলে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী, সৃজনশীল ও মানবিক হয়ে উঠবে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.