চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাম রাজনৈতিক জোট।
শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরীর পুরনো রেলস্টেশন চত্বরে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার যৌথ আয়োজনে গণসমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
‘জনমত উপেক্ষা করে লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়া চলবে না’ স্লোগান সামনে রেখে এ গণসমাবেশ আয়োজিত হয়।
সমাবেশ থেকে ঘোষণা আসে, সারা দেশে ৯-২৩ নভেম্বর বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে। এর মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করা হবে। এতেও ফল না এলে হরতাল ও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম বলেন, জনগণের মত উপেক্ষা করে দেশের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার কোনো এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।
তিনি বলেন, “জনগণ এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে—তারা বন্দর ইজারা ইস্যুতে কী ভাবছে, জাতি জানতে চায়।”
শাহ আলম আরও বলেন, “দেশবিরোধী চক্রান্ত চলছে। মিয়ানমারের করিডর দেওয়ার আলোচনা আমরা শুনেছি, এখন বন্দর দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বুকের রক্ত দিয়ে হলেও আমরা বন্দর রক্ষা করব।”
চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কনটেইনার টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হওয়া সেই প্রক্রিয়া এখন অন্তর্বর্তী সরকারও এগিয়ে নিচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড-এর সঙ্গে সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে বিভিন্ন শ্রমিক ও বাম সংগঠন। ২২ অক্টোবর শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে ঢাকায় ২৭ অক্টোবর ও চট্টগ্রামে ১ নভেম্বর অনশন কর্মসূচি পালিত হয়। শনিবারের গণসমাবেশ ও মশাল মিছিল ছিল চলমান সেই আন্দোলনের অংশ।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এখনই এ সিদ্ধান্ত থেকে না ফিরলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার বলছে, বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দর গেলে দক্ষতা বাড়বে ও লাভজনক হবে। কিন্তু যাদের হাতে দেশের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, নির্বাচন ব্যর্থ—তাদের এই যুক্তি টেকে না। যদি তাই হয়, তাহলে কি আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বও বিদেশিদের হাতে দিতে হবে?”
বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যেই ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। অথচ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে অব্যবস্থাপনা ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। সমাবেশ থেকে দাবি করা হয়, ইজারার আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বন্দর মাশুল ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
এসময় আরও বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন নাসু, বাসদ (মার্ক্সবাদী) নেতা মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল নেতা শেখ নুরুল্লাহ বাহার।
সমাবেশ শেষে রেলস্টেশন চত্বর থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত মশাল মিছিল করেন বাম রাজনৈতিক জোটের নেতাকর্মীরা।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.