এমডি কর্তৃক ভুল লভ্যাংশ প্রস্তাব, পদ্মা অয়েলের আর্থিক ক্ষতিসাধন

২৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত কর পরিশোধ

এমডি ও সিএফও’র স্বাক্ষরিত লভ্যাংশ ঘোষণার ভুল প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে পদ্মা অয়েল পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ১৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

গতকাল (৫ নভেম্বর) কোম্পানিটির ২০২৪-২৫ হিসাববছরের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

কোম্পানি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মোট কম্প্রিহেনসিভ আয় করেছে ৫৬২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, অথচ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ১৬০ শতাংশ। অর্থাৎ মোট ১৫৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা ন্যুনতম লভ্যাংশ হার ৩০ শতাংশ এর কম।

কোম্পানি আইন ১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন অনুযায়ী কর পরবর্তী নীট আয়ের ৭০ শতাংশ এর বেশি সংরক্ষণ করা যাবেনা (অর্থাৎ নীট আয়ের ন্যুনতম ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করার বিধান রয়েছে,) অন্যথায় রিজার্ভ ফান্ডে যে পরিমাণ টাকা স্থানান্তরিত করা হবে, তার উপর সরাসরি ১০ শতাংশ হারে কর প্রদেয় হবে।

ফলে কোম্পানির আইনের ১৮ নং আইন লংঘনের কারণে রিজার্ভ ফান্ডে স্থানান্তরিত অবশিষ্ট ৪০৫ কোটি ৭১ লাখ টাকার উপর ১০ শতাংশ হারে অর্থাৎ ৪০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত কর পরিশোধ করতে হবে।

তাহলে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মোট নগদ লভ্যাংশ বাবদ ১৫৭ কোটি ১৭ লাখ এবং অতিরিক্ত কর বাবদ ৪০ কোটি ৫৭ লাখ টাকাসহ কোম্পানিকে সর্বমোট ১৯৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা খরচ করতে হবে।

অথচ কোম্পানি যদি আইন অনুযায়ী  ন্যুনতম ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ অর্থাৎ ১৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করতো তাহলে তখন মোট খরচ হতো ১৭১ কোটি ৯০ লাখ টাকা, আর কোন অতিরিক্ত কর পরিশোধ করতে হতো না। ফলে এমডি ও সিএফও কর্তৃক শেয়ারহোল্ডারদের কম লভ্যাংশ প্রদানের প্রস্তাব (৩০ শতাংশ এর কম) করার কারণে এবং কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে ভুল ব্যাখ্যার কারণে কোম্পানির প্রায় ২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। শেয়ারহোল্ডার অর্থাৎ কোম্পানির প্রকৃত মালিকদের কম লভ্যাংশ ঘোষণার মাধ্যমে ঠকাতে গিয়ে কোম্পানির প্রায় ২৬ কোটি টাকার আর্থিক  ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক এমন আত্মাঘাতি ও অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণে শেয়ারহোল্ডাররা হতাশ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) পদ্মা অয়েল পিএলসির ৫১ শতাংশ মালিক। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি ও আইসিবিসহ অন্যান্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ঠকাতে গিয়ে কোম্পানির প্রায় ২৬ কোটি টাকা লোকসান দিতে হলো। এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে কোম্পানির ২৬ কোটি টাকা ক্ষতির জন্য দায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শেয়ারহোল্ডাররা পরিচালনা পর্ষদের প্রতি অনুরোধ করা হয়। বরাবরই, তেল কোম্পানিগুলো সবসময় ভালো লাভ করলেও শেয়ারহোল্ডারদের ন্যায্য লভ্যাংশ দিতে চায় না। যার ফলে কোম্পানির বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রিজার্ভ গড়ে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মফিজুর রহমানকে কল করা হলে তিনি ‘মিটিংয়ে আছি’ দোহাই দিয়ে ফোন রেখে দেন। পরবর্তিতে তাকে আবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এদিকে এই প্রসঙ্গে কোম্পানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) কাঞ্চন চন্দ্র সোম জানান, ‘এ সিদ্ধান্ত বোর্ডের। আমার এ প্রসঙ্গে কিছু বলার এখতিয়ার নেই।‘

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.