বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের তথ্য বছরের পর বছর ধরে গোপন রাখার অভিযোগ এবার তদন্ত করতে চলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি একটি স্পষ্ট উত্তর খুঁজছে, এই গোপনীয়তার পেছনে দায়ী কে?
আইএমএফের প্রশ্ন, গোপন রাখার পেছনে কোনো পরিকল্পিত ‘কারচুপি’, নাকি ব্যাংক পরিদর্শনে চরম ‘গাফিলতি’? সরকার পরিবর্তনের পর এখন ধীরে ধীরে খেলাপি ঋণের আসল চিত্র বেরিয়ে আসছে। সংস্থাটি এখন জানতে চায়, এত বড় একটি সত্য কীভাবে এতদিন জনসমক্ষে আসতে পারেনি।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চায় এই খেলাপি ঋণের তথ্য কীভাবে এবং কেন গোপন রাখা হয়েছিল? আর তা ব্যাংক পরিদর্শনের সময় কেন ধরা পড়েনি— তার স্পষ্ট ব্যাখ্যাও চেয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। বৈঠকে থাকা একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে গত কয়েক বছর ধরে প্রকৃত অবস্থা গোপন রেখে ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্য ‘সুস্থ’ দেখানোর একটি চেষ্টা ছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের পর সেই গোপনীয়তার পর্দা এখন সরে যাচ্ছে। ফলে, হঠাৎ করেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ লাফিয়ে বেড়ে প্রকৃত চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগের সরকারের সময়ে নিয়মিতভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখানো হতো। ব্যাংক পরিদর্শন রিপোর্টেও এই তথ্য ধরা পড়েনি বলে অভিযোগ। কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রকাশিত তথ্য বলছে, মাত্র এক বছরের মধ্যেই দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় চার লাখ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে এই হার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে ৪০ শতাংশের ওপরে উঠে এসেছে।
আইএমএফের প্রশ্ন, খেলাপি ঋণ এত বেড়ে যাওয়ার পেছনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কোনো ভূমিকা ছিল কি না? ঋণ শোধ না করার পরও সেগুলো খেলাপি হিসেবে গণ্য না করার পেছনে কোনো আইনি দুর্বলতা বা ইচ্ছাকৃত চেষ্টা কাজ করেছে কি না? ব্যাংক পরিদর্শন ব্যবস্থায় এমন ভয়াবহ ত্রুটি কীভাবে রয়ে গেল? পরিদর্শকরা কি দায়সারা কাজ করেছেন, নাকি সিস্টেমে ইচ্ছাকৃত কারচুপি হয়েছে?
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা। তবে গত বছরের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর গোপন করে রাখা বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ পেতে শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, মাত্র এক বছরে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বেড়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়েছে, আর বেসরকারি খাতেও তা ১০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ বাস্তব চিত্র বলছে, লক্ষ্য থেকে বাংলাদেশ অনেক দূরে সরে গেছে। এই ব্যবধানই আইএমএফকে আরও সতর্ক ও তদন্তমুখী করেছে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.