ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) মিউচুয়াল ফান্ড খাতে বড় ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। সংস্থাটি এই খাতের ফি কাঠামোকে আরও সহজ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগকারীদের জন্য কম ব্যয়বহুল করার প্রস্তাব দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) প্রকাশিত একটি পরামর্শপত্রে সেবি জানিয়েছে, ভারতের ৭৫ দশমিক ৬ লাখ কোটি টাকার মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রির ক্রমবর্ধমান আকার থেকে যেন বিনিয়োগকারীরাই সরাসরি বেশি উপকৃত হন, সেটিই এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য। প্রস্তাবটি নিয়ে জনমত আহ্বান করা হয়েছে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত।
বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ড প্রতিগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নানা ধরনের ফি ও খরচ আদায় করতে পারে, যা টোটাল এক্সপেন্স রেশিওর আওতায় পড়ে। এতে ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ফি, ডিস্ট্রিবিউশন খরচ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক চার্জ অন্তর্ভুক্ত থাকে। সেবি এখন এই কাঠামোকে সহজ ও স্বচ্ছ করতে চায়।
সেবির মোট ব্যয় অনুপাত (টিইআর) কমানোর সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করেন দেশটির বিশ্লেষকরা। এতে খরচ কমে যাবে, ফলে বিনিয়োগকারীর নেট রিটার্ন বাড়বে এবং মিউচুয়াল ফান্ডে আস্থা আরও দৃঢ় হবে।
২০১২ সালে সেবি ৫ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত অতিরিক্ত চার্জের অনুমতি দিয়েছিল, যা বিতরণ খরচ মেটাতে অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে চালু হয়েছিল। নতুন প্রস্তাবে এই অতিরিক্ত চার্জ সম্পূর্ণভাবে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে ফান্ডগুলোকে কিছুটা স্বস্তি দিতে সেবি প্রস্তাব দিয়েছে– মোট ব্যয় অনুপাত কাঠামোর প্রথম দুটি স্তরের হার ৫ বিপিএস বাড়ানো হবে। এতে কোম্পানিগুলো কিছুটা স্বস্তি পাবে এবং বিনিয়োগকারীদের মোট খরচ কমেই থাকবে।
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, সিকিউরিটিজ ট্রানজাকশন ট্যাক্স, গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স, কমোডিটি ট্রানজাকশন ট্যাক্স এবং স্ট্যাম্প ডিউটির মতো সরকারি কর আর মোট ব্যয় অনুপাতের আওতায় পড়বে না। অর্থাৎ– ভবিষ্যতে এই করগুলোর হারে কোনো পরিবর্তন হলে তা সরাসরি বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রভাব ফেলবে, ফান্ডের খরচে লুকিয়ে থাকবে না।
বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলো নগদ লেনদেনে ১২ বিপিএস এবং ডেরিভেটিভ ট্রেডে ৫ বিপিএস পর্যন্ত ব্রোকারেজ চার্জ করতে পারে। সেবি প্রস্তাব করেছে এই সীমা ২ বিপিএস ও ১ বিপিএসে নামিয়ে আনার। এতে বিনিয়োগ আরও স্বচ্ছ হবে এবং বিনিয়োগকারীদের ওপর দ্বৈত চার্জের বোঝা কমবে।
এই পদক্ষেপে ফান্ডগুলোর মুনাফা মার্জিন কিছুটা কমতে পারে, তবে এতে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগ সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।
এই নতুন ফি কাঠামো বাস্তবায়িত হলে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ আরও সহজবোধ্য ও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হবে। বিনিয়োগকারীরা সহজে বুঝতে পারবেন ঠিক কত টাকা তারা দিচ্ছেন এবং কোন পরিষেবার জন্য দিচ্ছেন।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতে নতুন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে, বিশেষ করে যারা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের (এসআইপি) মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করছেন তাদের আগ্রহ বাড়বে।
সেবি আরও প্রস্তাব দিয়েছে– প্রবীণ নাগরিক, মহিলা ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা বা ছাড় দেওয়া যেতে পারে।
যদি এই প্রস্তাবগুলো কার্যকর হয়, তাহলে ভারতের মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প আরও স্বচ্ছ, বিনিয়োগকারীবান্ধব ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। খরচ কমে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের লাভ বাড়বে এবং পুঁজিবাজারে আস্থা আরও সুদৃঢ় হবে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.