রুশ তেল কেনা বন্ধ করল ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এইচপিসিএল-মিত্তাল এনার্জি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কোর বৃহত্তম দুটি তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর রুশ অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল পরিশোধন কোম্পানি এইচপিসিএল-মিত্তাল এনার্জি (এইচএমইএল)।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত এই তেল কোম্পানির এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের পর ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, মস্কোর বিশেষ ছাড়ে তেল কিনে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় উসকানি দিচ্ছে ভারত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে রুশ তেল আমদানি কমানোর বিষয়ে রাজি হয়েছেন বলে দাবি করেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও নয়াদিল্লি ট্রাম্পের এই দাবির বিষয়ে কোনও তথ্য নিশ্চিত করেনি।

বিশ্বের বৃহত্তম ইস্পাত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আর্সেলরমিত্তালের চেয়ারম্যান লক্ষ্মী নিবাস মিত্তাল ও রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম করপোরেশন লিমিটেডের (এইচপিসিএল) যৌথ উদ্যোগে গঠিত এইচপিসিএল-মিত্তাল এনার্জি লিমিটেড (এইচএমইএল) বলেছে, তারা রুশ অপরিশোধিত তেল ক্রয় স্থগিতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

এইচএমইএলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্যের নতুন বিধিনিষেধ আরোপের পর গত সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “এইচএমইএলের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভারতের সরকার ও জ্বালানি নিরাপত্তা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

রুশ তেলের ভারতের বেসরকারি খাতের প্রধান ক্রেতা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গত সপ্তাহে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও ইইউর বিধিনিষেধের প্রভাব পর্যালোচনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্দেশনা মেনে চলব এবং ভারতের পক্ষ থেকেও যে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হলে, তা অনুসরণ করা হবে।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন বিধিনিষেধ অনুযায়ী ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। রিলায়েন্স জানিয়েছে, তাদের বহুমুখী তেল সংগ্রহ কৌশল পরিশোধন কার্যক্রমের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে, যাতে দেশীয় ও রপ্তানি বাজার—এমনকি ইউরোপের চাহিদাও পূরণ করা যায়।

বুধবার লন্ডনের দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচএমইএল রুশ তেলের বেশ কয়েকটি চালান গ্রহণ করেছে, যেসব জাহাজ পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসে।

তবে এইচএমইএল জানিয়েছে, তারা এসব জাহাজ নিজেরা ভাড়া নেয়নি এবং তেল পরিবহনে তাদের সীমিত নিয়ন্ত্রণ ছিল। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, যে জাহাজ ভারতের জন্য তেল সরবরাহ করেছিল, সরবরাহের সময় সেটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল না।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল আমদানিকারক দেশ ভারত তার মোট জ্বালানি চাহিদার ৮৫ শতাংশেরও বেশি বিদেশি সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরশীল। ঐতিহ্যগতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদকদের ওপর নির্ভরশীল নয়াদিল্লি ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার কাছ থেকে বিশেষ ছাড়ে তেল কিনতে শুরু করে, যখন রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.