দেশব্যাপী উদীচীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

আজ ২৯ অক্টোবর উদীচীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ঊনসত্তরের আগুনে জাগা সেই প্রথম গান থেকে আজও বাজে উদীচীর কণ্ঠে মানুষের মুক্তির সুর- শোষণ, অন্ধকার ও প্রতিক্রিয়াশীলতার বিপরীতে আলোর, সাম্যের, মানবতার জয়গান। ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর শিল্পী সংগ্রামী সত্যেন সেনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠার পর উদীচী হেঁটেছে হাটে-মাঠে-ঘাটে, কৃষকের উঠোনে, শ্রমিকের ডেরায়। ৬৯ থেকে ২৪—প্রতিটি গণঅভ্যুত্থানে উদীচী থেকেছে জনতার কণ্ঠস্বর হয়ে রাজপথে, গেয়েছে প্রতিবাদের, প্রেমের, মুক্তির গান। অতীতের সেই সংগ্রামের মশাল আজও হাতে—যখন চারপাশে ফ্যাসিবাদের ছায়া, স্বপ্নে ধুলো, আশায় শূন্যতা, তখনই সংস্কৃতির মাটি থেকে উঠে আসে উদীচী—প্রেরণার আগুন, প্রতিরোধের প্রতিজ্ঞা হয়ে। দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠন বাংলাদেশের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যশোর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, মেহেরপুর, চট্টগ্রাম, পাবনা, কক্সবাজার, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সৈয়দপুর সহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও শাখায় উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করেছে। কেন্দ্রীয় ভাবে অনুষ্ঠান শুরু হয় ঢাকায় সত্যেন সেন চত্বর থেকে বিকাল ৩:৩০টায় গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকী স্মরণে ‘লালশহর’ শিরোনামে উন্মুক্ত রাজপথ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী কার্যক্রম শুরু হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন আদিবাসী নেত্রী রেবেকা সরেণ।

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম এর সভাপতিত্বে ও সহ সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। অতিথি আলোচক হিসেবে বক্তৃতা করেন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, কবি ও শিল্পী কফিল আহমেদ, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বায়ক মফিজুর রহমান লালটু।

বক্তৃতায় বক্তাগণ বলেন, এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে আজ দেশ অতিক্রান্ত হচ্ছে। যে আশা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটিয়েছে, মানুষের সে আশা ও আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশে আরেক ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থান লক্ষ করা যাচ্ছে। মানুষের বাক স্বাধীনতার জন্য, ভাত-কাপড়ের অধিকারের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য নিরুপায় জনসাধারণের স্বতঃস্ফুর্ত অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশী জীবন দিয়েছে যে শ্রমজীবী মানুষ সেই শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সম্ভবনাকে হত্যাকরে পূর্বের মতো এবারও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এদেশীয় দোসররা নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হালুয়া-রুটি ভাগ করে নিতে সকল রকম ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিতে এদেশে গরীব মেহনতি মানুষের পক্ষের সরকার গঠনে কাজ করে যাওয়ার আহ্ববান জানান বক্তাগণ। বক্তাগণ বলেন দেশে সাম্রাজ্যবাদের মদদে নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান হচ্ছে, যাদের হাতে বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আজ নিষ্পেষিত, নির্যাতিত। এদের বিরুদ্ধে সংস্কৃতিক লড়াই গড়ে তুলতে হবে আর সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবে উদীচী।

সভাপতির বক্তৃতায় হাবিবুল আলম বলেন, উদীচীর বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে, বোমা মেরে হত্যা করা হয়েছে উদীচীর নেতাকর্মীদের, কিন্তু প্রতিবারই উদীচী দৃঢ়তার সাথে সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়িয়ে জবাব দিয়েছে। সামনের দিনেও উদীচী সকল ষড়যন্ত্রকে মকাবেলা করে মানবমুক্তির লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাবে।

এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এই পর্বে বৃন্দ সংগীত পরিবেশন করে- উদীচী, সমগীত, বাউলদল। একক সংগীত পরিবেশন করেন- রেজাউল করিম টুলু, মায়েশা সুলতানা উর্বি, জলসা সিদ্দীক। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে- উদীচী এবং একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন- দীপক সুমন, মৌমিতা জান্নাত।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.