পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে ডিএসই ও বিসিএমইএ’র বৈঠক অনুষ্ঠিত

বাজার উন্নয়নের ধারাবাহিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’র (বিসিএমইএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ মামুনুর রশিদ, এফসিএমএ’র নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার (২৯ অক্টোবর) ২০২৫ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ’র (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কোম্পানিগুলোর জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির কাঠামো, প্রক্রিয়া এবং সম্ভাব্য সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

আজ বুধবার ডিএসই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বৈঠকের শুরুতেই ডিএসই’র প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর যাত্রায় রয়েছে—যেখানে প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়, বরং একটি আধুনিক, সেবা ও কাস্টমার-সেন্ট্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।

তিনি আরও বলেন, “প্রাইমারি মার্কেট তথা আইপিও প্রক্রিয়ায় ডিএসই বৃহত্তর ডিজিটাল রূপান্তর আনছে। অতীতে যেখানে একটি আইপিও সম্পন্ন হতে দুই থেকে চার বছর সময় লাগত, এখন সেটি ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই নতুন আইপিও রুলস অনুমোদন পেতে যাচ্ছে, যা এক্সচেঞ্জকে আরও ক্ষমতায়ন করবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।”

ডিএসই একটি সেন্ট্রাল ডিজিটাল সাবমিশন সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে, যার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের পিএসআই, শেয়ারহোল্ডিং ও ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তনসহ সকল তথ্য এক জায়গায় জমা দিতে পারবে। দীর্ঘদিন নতুন কোম্পানি লিস্টিংয়ের ঘাটতির কারণে বাজারের সরবরাহপক্ষ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ডিএসই গুণগতমানসম্পন্ন নতুন কোম্পানি আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, ডিএসই’র তিনটি বোর্ড—মেইন বোর্ড, এসএমই বোর্ড ও এটিবি বোর্ড—এর মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যা ব্যাংকনির্ভর অর্থায়নের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, “ডিএসই এখন ওয়ান-টু-ওয়ান সার্ভিস প্রদানের জন্য প্রস্তুত। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি মেইন বোর্ড বা এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হয়, তাদের জন্য ডেডিকেটেড টিমের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম ভিত্তি হলো একটি শক্তিশালী ক্যাপিটাল মার্কেট, এবং শিল্পখাতকে এতে সম্পৃক্ত করাই ডিএসই’র এই রূপান্তর অভিযানের মূল লক্ষ্য।”

পরে ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক সাঈদ মাহমুদ জুবায়ের এক প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের কাঠামোগত ওভারভিউ, ডিএসই’র প্রোডাক্ট সমূহ, ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়া, এটিবি ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে মালিকানা হস্তান্তরের তুলনা, তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া, বিভিন্ন ধরণের ইনভেস্টমেন্ট অপশন, তালিকাভুক্তির সুবিধা এবং পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের জন্য চলমান উদ্যোগ সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

বিসিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ মামুনুর রশিদ, এফসিএমএ বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও শিল্পখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিএসই বর্তমানে একটি রূপান্তর যাত্রায় রয়েছে। এই যাত্রার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি একটি রেগুলেটরি সংস্থার পাশাপাশি নিজেকে আরও সার্ভিস ও কাস্টমার-সেন্ট্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি ডিএসই’র এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী ও ইতিবাচক বলে অভিহিত করে বলেন, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসে লিস্টিং প্রক্রিয়া, টাইমলাইন ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতবিনিময় করা একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ, যা বাজারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত পাঁচ দশকে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ইকুইটি ফাইন্যান্সিং এখনো খুবই সীমিত। বর্তমানে শিল্প বিনিয়োগের প্রায় ৯৮ শতাংশই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়, যা টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে একটি বড় বাধা।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আইপিও প্রক্রিয়া সহজীকরণ, লিস্টিংয়ের নিয়ম ও কাগজপত্রের চেকলিস্ট সংক্ষিপ্ত করা এবং কর ও ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত নীতিমালা আরও বিনিয়োগবান্ধব করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কমপ্লায়েন্স কস্ট অর্থাত্‌ ইস্যু ম্যানেজার, অডিটর, এবং অন্যান্য রেগুলেটরি ফি অনেক ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে। AGM আয়োজন, রেগুলেটরি সাবমিশন এবং বিভিন্ন ফি কোম্পানিগুলোর জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিএসই ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ডিজিটাল উদ্যোগ, যেমন অনলাইন AGM, হাইব্রিড মিটিং এবং ইলেকট্রনিক ফাইলিং ব্যবস্থা এই জটিলতা অনেকটাই কমিয়ে এনেছে।

এছাড়া বক্তারা কর্পোরেট গভর্নেন্স চর্চা জোরদার, কমপ্লায়েন্স কস্ট হ্রাস, ইস্যু ম্যানেজারদের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিদেশে রোডশো আয়োজনের পরামর্শ দেন।

তাঁদের মতে, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে পুঁজিবাজারে মানসম্মত কোম্পানির লিস্টিং বাড়বে, বাজারে আস্থা পুনঃস্থাপিত হবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন সিরামিক কোম্পানির সিএফও ও কোম্পানি সেক্রেটারিরা।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.