আর্থিক দুশ্চিন্তায় কর্মীদের উৎপাদনশীলতা কমছে: মেটলাইফের গবেষণা

দেশে বিভিন্ন খাতের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের আর্থিক দুশ্চিন্তা তাদের কাজের প্রতি মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে—সম্প্রতি মেটলাইফ বাংলাদেশের পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

‘এমপ্লয়ি বেনিফিট ট্রেন্ডস স্টাডি (ইবিটিএস)’ শীর্ষক এ জরিপে দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশের বেশি কর্মী মনে করেন, আর্থিক চাপ সরাসরি তাদের কর্মদক্ষতা হ্রাস করে। ৪১ শতাংশ জানিয়েছেন, আর্থিক দুশ্চিন্তা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে মেটলাইফ বাংলাদেশ। এতে বিভিন্ন খাতের ৫৭১ জন কর্মী ও ১৪২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

অনুষ্ঠানে মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলা আহমদ বলেন, “আর্থিক চাপ ও সীমিত সুবিধা কর্মীদের মনোবল দুর্বল করে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মীদের সার্বিক কল্যাণ ও যোগাযোগ সংস্কৃতি উন্নত করার দিকে জোর দিতে হবে।”

গবেষণায় দেখা যায়, ৫৩ শতাংশের বেশি কর্মীর অবসর-পরবর্তী জীবনের কোনও আর্থিক পরিকল্পনা নেই। প্রায় অর্ধেক কর্মী চান, তাদের নিয়োগদাতারা অবসরকালীন সঞ্চয় ব্যবস্থায় সহায়তা করুন।

গবেষণায় ৭২ শতাংশ কর্মী জানান, প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতি যত্নবান হলেও সার্বিক কল্যাণে ঘাটতি রয়েছে। ৭৮ শতাংশ বলেছেন, স্বাস্থ্যবিমা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মতো সুবিধা আনুগত্য বাড়ায়, কিন্তু এসব সুবিধা অনেক প্রতিষ্ঠানে সীমিত।

নিয়োগদাতাদের অর্ধেকেরও বেশি (৫৬ শতাংশ) মনে করেন, কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ধরে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ৪৯ শতাংশ বলেছেন, কর্মীদের সম্পৃক্ততা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত এক বছরে ৫১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দক্ষ কর্মী ধরে রাখতে ও মনোবল বাড়াতে সুবিধা প্রদানে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।

গবেষণা অনুযায়ী, ৭৮ শতাংশ নিয়োগদাতা বিশ্বাস করেন— কর্মীদের জন্য উপযুক্ত সুবিধা ও কল্যাণমূলক উদ্যোগ কর্মস্থলের সংস্কৃতি ও পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন— **সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)**র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয় এবং মেটলাইফ বাংলাদেশের সিইও আলা আহমদ।

গবেষণার সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে— বাংলাদেশের বেসরকারি খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। কর্মীরা এখন শুধু বেতন নয়, তাদের সার্বিক আর্থিক ও মানসিক সুস্থতার নিশ্চয়তা চান। আর্থিক সুস্থতা এখন বিলাসিতা নয়, বরং উৎপাদনশীলতার অপরিহার্য উপাদান।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.