ফারইস্টের সাবেক চেয়ারম্যানের বিপুল সম্পদের তথ্য উদঘাটন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৫ দিনের রিমান্ডে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম নিজের ও পরিবারের দেশ-বিদেশে সম্পদ, অর্থপাচারসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।

সোমবার দুদক প্রধান কার্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বাসসকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দুদকের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডে দেশ-বিদেশে নজরুল ইসলাম নিজের ও তার পরিবারের নামে থাকা সম্পদের বিষয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন। দুদকের ফরেনসিক পরীক্ষাতেও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আসামি নজরুল ইসলামকে দুদকের মামলায় রাজধানীর বংশাল থেকে গত ২৩ অক্টোবর গ্রেফতার করে দুদক। সেদিন বিকেলে তাকে আদালতে তোলা হলে আদালত দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি আজ ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত রিমান্ডে ছিলেন। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো করা হয়েছে।

দুদক জানায়, নজরুল ইসলাম রিমান্ডে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ও তার পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ২০১৫ সালে তিনি প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ কোটিরও বেশি টাকা) যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে ওয়েলিংটন এলাকায় একটি বাড়ি ক্রয় করেন।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, ২০১৪ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের নামে রাজধানীর ৩৬, তোপখানা রোডের ২০৭ কোটি টাকার জমি ক্রয়ের সময় প্রায় ২৮ কোটি টাকা ভাগাভাগি করা হয়, যার মধ্যে নজরুল ইসলাম একাই প্রায় ৬ কোটি টাকা ভাগ পান।

এছাড়া তিনি জমি বিক্রেতা আজহার হোসেন খানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তার কাছ থেকে নিজ নামে ১০ কোটি টাকা ও স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আরও ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করে বিদেশে পাচার করেন বলে স্বীকার করেছেন।

নজরুল ইসলাম রিমান্ডে বলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এম এ খালেক তার নিজ ও ঘনিষ্ঠদের নামে ১১টি বেনামী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৫৯১ কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাৎ করেন। তিনি স্বীকার করেন যে, এম এ খালেক, তার ছেলে শাহরিয়ার খালেদ, প্রাইম ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটিজ লি., প্রাইমেশিয়া ইউনিভার্সিটি ও প্রাইমেশিয়া ফাউন্ডেশনের ইত্যাদি কোম্পানি দেখিয়ে ঋণের নামে আত্মসাৎ করেন।

দুদক জানায়, নজরুল ইসলাম ২০১৬ সালে ১০ লাখ টাকায় রাজধানীর ঢাকা বোট ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাবসহ মোট ১৪টি ক্লাবের সদস্য হন। বারিধারা ক্লাবের সদস্য হন ২ লাখ টাকায়।

রিমান্ডে নজরুল ইসলাম জানান, তার ঘোষিত ও অঘোষিত সম্পদের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকারও বেশি। তার উল্লেখযোগ্য সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে- বারিধারায় ৮ কাঠার ওপর ‘পুতুল হাউজ’ নামে ট্রিপলেক্স বাড়ি-যা বিদেশিদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়, গুলশান-১ এ ভাসাবির পেছনে ৩ হাজার ২ শত বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বারিধারার ডিএইচওএস এলাকায় ২ হাজার ৮৪১ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, গুলশান-২ এ ৫ কাঠার ওপর দুইতলা অফিস ভবন, ভূলতা গাউছিয়া (নারায়ণগঞ্জে) আজহার হোসেন খান ও এম এ খালেকের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় প্রায় ১৮ কোটি টাকার প্রাইম শপ কোম্পানি, মাতুয়াইলে ২ কোটি টাকার সম্পদ (যা বর্তমানে তার দখলে নেই), নিকুঞ্জে ‘পুতুল হাউজ’ নামে তিন কাঠার ওপর একটি ডুপলেক্স বাড়ি, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে কৃষি জমি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ২০/এ/৫, ব্লক-জি তে ৩ হাজার ৬ শত বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট ইসলামী প্রোপার্টিজ, সিভিসি ফাইন্যান্স ও ফারইস্ট ফাইন্যান্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৫-২০ কোটি টাকার শেয়ার।

দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তার সম্পদের উৎস ও অর্থ পাচারের তথ্য যাচাইয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই শেষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.