পশ্চিমবঙ্গে মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকের তথ্য মিলছে না! আগামী তিন মাসের মধ্যেই সেই বিপুলসংখ্যক ভোটারদের যাচাই-বাছাই করে সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে শিগ্গিরই শুরু হতে চলেছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় ২০০২ সালের ভোটার তালিকা ও ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত সর্বশেষ তালিকা মিলিয়ে দেখা হয়েছে— দুই তালিকার মধ্যে মাত্র ৫২ শতাংশ ভোটারের তথ্য মিলে গিয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৭.৬ কোটি। অর্থাৎ প্রায় ৩.৫ কোটি ভোটারের তথ্য মেলেনি। এই বিশালসংখ্যক ভোটারের তথ্য তিন মাসের মধ্যেই যাচাই করতে হবে কমিশনকে। বিহারে এই প্রক্রিয়ায় যাচাই করতে হয়েছিল প্রায় ২ কোটি ভোটারকে।
কমিশন সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে এই এসআইআর প্রক্রিয়া চলবে তিন ধাপে।
প্রথম ধাপ: ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করা ও তথ্য সংগ্রহ। এই ধাপে প্রতিটি পরিবারের ভোটারদের তথ্য যাচাই করা হবে এবং গণনা সম্পন্ন হবে। সময় লাগবে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ দিন।
দ্বিতীয় ধাপ: প্রথম ধাপের এক সপ্তাহ পর প্রকাশ করা হবে খসড়া ভোটার তালিকা। এই তালিকা প্রকাশের পর ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আপত্তি, সংশোধন বা বাদ পড়া নাম যুক্ত করার আবেদন করা যাবে। এই পর্ব চলবে প্রায় এক মাস।
তৃতীয় ধাপ: সংশোধন ও আপত্তি নিষ্পত্তির পর প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। সমস্ত যাচাই-বাছাই শেষ করে এক সপ্তাহের মধ্যেই এই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এই বিশাল প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যেই ব্লক লেভেল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ফর্ম বিতরণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এটা আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। এত বড় পরিসরে একসঙ্গে ভোটার যাচাইয়ের কাজ করা অত্যন্ত জটিল। তবু আমরা চেষ্টা করছি যাতে রাজ্যের প্রতিটি নাগরিক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন।”
ভোটারদের সুবিধার জন্য প্রতিটি জেলা ও শহরাঞ্চলে হেল্পডেস্ক খোলার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক ও বাইরের রাজ্য থেকে আসা কর্মীদের সহায়তায়। কমিশন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই শুরু হতে পারে এই এসআইআর প্রক্রিয়া।
এদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এসআইআর শুরু হলে যাবতীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে কমিশনের হাতে। এই সময় কোনও কর্মী বা আধিকারিককে বদলি করা যাবে না। এসআইআর চলাকালীন বিএলও বা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অন্য কোনও দায়িত্ব দেওয়া হবে না। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নোটিশ জারি করবে কমিশন।
সব মিলিয়ে অর্ধেক ভোটারের তথ্য অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও রাজ্যজুড়ে তৎপরতা এখন তুঙ্গে। তিন মাসের মধ্যেই সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রকাশে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নির্বাচন কমিশন।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.