বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা মো. জান্নাতুল ফৈরদৌস ইবনে হকের আদালত এই আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আজ রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় তদন্তকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আসামি রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছে এটাকে এজাহারে গ্রহণ করার নির্দেশও দেন। বিগত দিনের থানার পুলিশ, তদন্ত কর্মকর্তা, পিবিআই এবং অনেক ম্যাজিস্ট্রেটের এই মামলায় গাফলতি ছিল। এটাকে হত্যা মামলা হিসাবে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠানের জন্য যে ভূমিকা রাখা দরকার ছিল, উনারা সেটা করতে পারেননি। এ কারণে নতুনভাবে এই মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসাবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবিদ হাসান বলেন, ‘সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবা কমর উদ্দিন রমনা মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা সায়ের করেন। পরের বছর তিনি মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় রিজভী ওরফে ফরহাদ নামে এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে সালমানকে কীভাবে হত্যা করা হয়, তা উঠে আসে। তারপরও মামলাটি আলোর মুখ দেখেনি। সবশেষ পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। আদালত আজ সেই আদেশ রদ-রহিত করেন। একইসঙ্গে কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। তদন্ত করে রমনা মডেল থানা পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এ দিন বেলা ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। এরপর বিচারক রায়ের সারমর্ম পড়ে শুনান। ঘন্টাব্যাপী রায়ের বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলেন ধরেন। পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ্য করে বলেন, ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ রদ ও রহিত করা হলো। এ বিষয়ে সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দেওয়া হলো। সংশ্লিষ্ট রমনা থানার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্তভার দেওয়া হলো। নথী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ইউডি শাখায় পাঠানো হলো। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো নির্দেশ দেন আদালত।
নথী সার্বিক দিক বিবেচনায় দেখা গেছে, পিবিআই তদন্তে সামিরা হক, আশরাফুল হক ডনকে এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে। অথচ তাদের থাকা উচিত ছিল অন্যত্রে। যদি কোনও ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন, তাকে প্রচারণার অভিযোগে আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটাও হয়নি।
এজাহারে ভেতরে আকা ২৬ কার্টুন দেখিয়ে বিচারক বলেন, এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। এগুলোর মাধ্যমে মামলাটিকে ভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাবিত করেছেন। এখানে তদন্ত কর্মকর্তার গাফলতির কথা তুলে ধরেন।
রিভিশন শুনানিকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে সালমান শাহের মামা আলমগীর কুমকুমসহ অনেক ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা সালমান শাহ’র মৃত্যুর বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। রিভিশন রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন সালমান শাহের মামা আলমগীর কুমকুম।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে চিত্রনায়ক সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত করতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। প্রতিবেদনে এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলা হয়। পরে ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। তবে প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করেন কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত।
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলা হয়। কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর ছেলে হত্যা মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। সর্বশেষ মামলাটি পিবিআই তদন্ত করেন।
২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। ২০২২ সালের ১২ জুন এই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের হয়।
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়াপাড়ায় নানাবাড়িতে সালমান শাহের জন্ম। এই নায়কের মৃত্যু হয় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.