আরও ৪ ইসরায়েলির মরদেহ হস্তান্তর করেছে হামাস

গাজা থেকে হামাস আরও চারজন বন্দীর মরদেহ ইসরায়েলের কাছে ফেরত দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ। মঙ্গলবার গভীর রাতে রেডক্রস কফিনে মোড়ানো মরদেহগুলো সংগ্রহ করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।

এর আগের দিন সোমবার, ফিলিস্তিনের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ২০ জন জীবিত ও চারজন মৃত জিম্মির মরদেহ ফিরিয়ে দিয়েছিল।

রেডক্রস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইসরায়েল ৪৫ জন মৃত ফিলিস্তিনির মরদেহ গাজায় ফেরত দিয়েছে। যাদের মরদেহ ইসরায়েলেই রাখা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, সোমবার দুপুরের মধ্যে ৪৮ জন জিম্মিকে ফেরত দেওয়ার কথা ছিল।

গাজা থেকে সব জীবিত জিম্মি ইসরায়েলে ফেরত গেলেও এখনো ২০ জন জিম্মির মরদেহ ফেরত না দেওয়ায় হামাসের ওপর ইসরায়েলি সরকারের চাপ বাড়ছে।

মঙ্গলবার আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, “হামাসকে চুক্তি অনুযায়ী সব জিম্মিকে তাদের পরিবারের কাছে দাফনের জন্য ফিরিয়ে দিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন যে, জিম্মির মরদেহ ফেরত দিতে বিলম্ব হলে কিংবা এ নিয়ে ইচ্ছাকৃত কালক্ষেপণ করা হলে সেই অনুযায়ীই প্রতিক্রিয়া জানাবে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাস চুক্তি লঙ্ঘন করে জিম্মিদের মরদেহ ফেরত না দেওয়ায় তারা গাজায় ত্রাণ সহায়তা সীমিত করবে। একই সাথে মিসরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার পরিকল্পনাও স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।

অন্যদিকে হামাস বলছে, মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ শনাক্ত করতে তাদের অসুবিধা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বলা হয়, হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হয়তো নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সব দেহ খুঁজে নাও পেতে পারে।

একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যারা এখনো ফেরত আসেনি কিংবা যাদের দেহাবশেষও খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাদের খুঁজে বের করতে একটি আন্তর্জাতিক টাস্কফোর্স কাজ শুরু করবে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ১০ অক্টোবর স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যে মঙ্গলবার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় পূর্ব গাজা ও খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে আলাদা দুটি ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছে।

গাজার পূর্বাঞ্চলীয় শেজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা ওয়াফা।

ওয়াফা একটি মেডিকেল সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে যে, অনেকদিন পর ফিরে যখন ফিলিস্তিনিরা ওই এলাকায় ঘরবাড়ি দেখছিল তখন তাদের ওপর ড্রোন থেকে হামলা চালানো হয়।

তবে এর জবাবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা অনুযায়ী যে হলুদ রেখা পর্যন্ত তাদের সৈন্যরা সরে গিয়েছে। সেই হলুদ রেখা কোনও কোনও ফিলিস্তিনি অতিক্রমের চেষ্টার কারণেই গুলি চালানো হয়েছে।

এদিকে, হামাস যোদ্ধারা গাজায় তাদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃ-প্রতিষ্ঠার প্রমাণ দিয়েছে। হামাস দাবি করেছে, তাদের যোদ্ধারা নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার এবং আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

সোমবার ট্রাম্প মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তুরস্কও।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখোসহ মুসলিম ও আরব বিশ্বের বহু দেশের রাষ্ট্রনেতাসহ ২০টিরও বেশি বিশ্বনেতা এতে উপস্থিত ছিলেন। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং হামাসের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা প্রথমে ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের একটি অন্তর্বর্তী কমিটির অধীনে পরিচালিত হবে, যাকে “বোর্ড অব পিস” তত্ত্বাবধান করবে। পরে সংস্কার কাজ শেষ হলে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে।

তবে পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলো এগিয়ে নিতে আরো আলোচনার প্রয়োজন হবে।

যদিও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার কিংবা এর সময়সীমা, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, এবং গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে এখনো অনেক ধোঁয়াশা ও বিতর্ক রয়ে গেছে।

হামাস আগেই জানিয়েছে, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা অস্ত্র জমা দেবে না এবং গাজায় বিদেশি শাসন প্রতিষ্ঠাও তারা মানবে না।

২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়। সে সময় ২৫১ জনকে আটক করে নিয়ে আসে হামাস। এরপর ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা শুরু করে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেই থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ৮৬৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বিবিসি বাংলা

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.