হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন নেতানিয়াহু সরকারের 

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ চুক্তি অনুমোদন করেছে ইসরায়েল সরকার। এর ফলে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংঘর্ষ বন্ধ এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মধ্যস্থতাকারীদের তরফ থেকে চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের সম্মতির ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পর ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা চুক্তিটি অনুমোদন করে। এই চুক্তির অধীনে ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে।

 

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, সরকার এখনই জীবিত ও মৃত সব জিম্মি মুক্তির কাঠামো অনুমোদন করেছে।

 

ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র জানান, সরকারের অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এরপর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। বর্তমানে ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মি জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, এবং দু’জনের ভাগ্য অজানা। হামাস জানিয়েছে, মৃতদের মরদেহ উদ্ধারে সময় লাগতে পারে।

 

দুই বছরের যুদ্ধে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পেয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কেও টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি এমন দিকে গিয়েছিল যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি নেতানিয়াহুর প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।

 

চুক্তিতে অগ্রগতির ঘোষণার পর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আর এখন এই চুক্তির মাধ্যমে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। হামাসের নির্বাসিত নেতা খালিল আল-হাইয়া জানান, যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধ শেষের আশ্বাস দিয়েছে।

 

চুক্তি কার্যকর হলে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়বে। হাজার হাজার গৃহহীন মানুষ-যারা তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন- তারা খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাবেন।

 

চুক্তিটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে যুদ্ধ অবসানের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হবে এটি। তবে জটিলতা এখনও কাটেনি। ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মুক্তি হতে যাওয়া বন্দিদের তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ইসরায়েলে বন্দি কিছু প্রভাবশালী নেতার পাশাপাশি শত শত আটক ব্যক্তির মুক্তি চাইছে হামাস।

 

ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলোও এখনও আলোচনায় আসেনি। এর মধ্যে রয়েছে- যুদ্ধ শেষে গাজার প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে গঠিত হবে এবং হামাসের ভবিষ্যৎ কী হবে।

 

নেতানিয়াহু নিজ দলেও বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। কট্টর ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হামাস ধ্বংস না হলে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন।

 

চুক্তিটি আরব ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন পেয়েছে এবং ট্রাম্পের জন্য বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

 

যুদ্ধবিরতির পর গাজায় শান্তি রক্ষা ও পুনর্গঠন সহায়তা নিয়ে প্যারিসে পশ্চিমা ও আরব দেশগুলোর বৈঠক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, গাজার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গঠিত একটি যৌথ টাস্কফোর্সে ২০০ সেনা পাঠাবে তারা, যদিও কোনও মার্কিন সেনা গাজা উপত্যকার ভেতরে থাকবে না। এতে মিশর, কাতার, তুরস্ক এবং সম্ভবত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক প্রতিনিধিরাও থাকবে।

 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হন। এর প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার শিখণ্ডী খাড়া করে আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুবছরে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.