রশিদের মাইলফলকে বাংলাদেশের মাঝারি পুঁজি

তানজিদ হাসান তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরলেন দ্রুতই। সাইফ হাসান প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও অভিষেকটা রাঙাতে পারলেন না তিনি। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারের ব্যর্থতার দিনে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে বিপদ সামাল দেয় বাংলাদেশ। শতরানের জুটি গড়ার পাশাপাশি হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন দুজনই। তবে মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কপাল পুড়ে হৃদয়ের। একটু পর ফেরেন মিরাজও। হৃদয় ৫৬ ও মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে ৬০ রান।

দুজনের বিদায়ের পর জাকের আলী অনিক ও নুরুল হাসান সোহানের কেউই ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। মিরাজ ও হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরির পরও বাকিদের ব্যর্থতায় ২২১ রানে অল আউট হয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ধীরগতিতে ইনিংস শুরু করেন সাইফ হাসান এবং তানজিদ হাসান তামিম। এর মধ্যে আফগান অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে জীবন পান তানজিদ। ওমরজাইর শর্ট বলটি পুল করে স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন তানজিদ, যা লুফে নিতে পারেননি রহমত শাহ। এর এক বল পরই খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তানজিদ। হার্ড লেংথে করা ওমরজাইয়ের বলটি তানজিদের ব্যাটের বাইরের কানায় লাগে। উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ ক্যাচটি লুফে নেন উইকেটরক্ষক রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ফেরার আগে ১০ বলে দুই চারে ১০ রান করেন তানজিদ।

পরপর দুই ওভারে উইকেট বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেন ওমরজাই। তানজিদের পর আরেক বাঁহাতি টপ অর্ডার ব‍্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তকে বিদায় করেন তিনি। ওমরজাইয়ের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে মিড অফে সহজ ক‍্যাচ দেন শান্ত, যা লুফে নেন হাশমতউল্লাহ শহীদি। ৫ বলে ২ রান করেন শান্ত। ২৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে দলীয় পঞ্চাশ পার করিয়ে দিয়ে ভালো খেলতে খেলতে ফিরে যান সাইফ হাসানও। ওয়ানডে অভিষেকটা মনে রাখার মতো হয়নি এই ওপেনারের। নাঙ্গোলিয়া খারোতের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটিতে বড় শট খেলতে গিয়ে ওয়াইড লং অফে ক্যাচ তুলে দেন সাইফ। দুর্দান্ত ক্যাচটি লুফে নেন রশিদ খান।

৩৭ বলে পাঁচটি চারে ২৬ রান আসে সাইফের ব্যাটে। ৫৩ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তিন উইকেট হারালেও তাওহীদ হৃদয় এবং অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ২৫.১ ওভারে দলীয় শতক স্পর্শ করে লাল সবুজের দল। আফগানিস্তান স্পিন আক্রমণের পশরা সাজিয়ে বসলেও বাংলাদেশের ব্যাটাররা দারুণভাবে দেখেশুনে খেলছেন। দলীয় একশ ছোঁয়ার একটু পর ৮২ বলে জুটির পঞ্চাশ রান স্পর্শ করেন হৃদয়-মিরাজ।

দারুণ খেলতে খেলতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের দশম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। ৭৫ বলে আসে হৃদয়ের এই ফিফটি। মোহাম্মদ নবির বলে ডিপ মিড উইকেটে দারুণ এক ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি তুলে নেন এই ব্যাটার। হৃদয় হাফ সেঞ্চুরি করার একটু পরই হাফ সেঞ্চুরি করেন মিরাজ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি মিরাজের সপ্তম হাফ সেঞ্চুরি। ৭৪তম বলে খারোতের ডেলিভারিতে লং অফে ঠেলে এক রান নিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মিরাজ।

১৪১ বলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে শতরান তোলেন হৃদয়-মিরাজ। ফলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো শতরানের জুটি গড়ে বাংলাদেশ। যদিও সেই জুটি বেশিদূর আগাতে পারেনি। মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন হৃদয়। খারোতের বলে ড্রাইভ করে বল দূরে সরে যাওয়ায় রানের জন‍্য ছুটেন হৃদয়। যদিও মিরাজ রান নিতে আগ্রহী ছিলেন না। হাশমতউল্লাহ শহীদি বল কুঁড়িয়ে উইকেটরক্ষকের দিকে ফেরত পাঠালে ফিরতে হয় হৃদয়কে। কেননা ততক্ষণে উইকেটের মাঝ বরাবর জায়গা পার করে ফেলেছিলেন এই ব্যাটার। হৃদয়ের বিদায়ে ১৪২ বল স্থায়ী ১০১ রানের জুটিটি ভাঙে।

৫৬ রানে থাকা অবস্থায় রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মিরাজ। খারোতের বলে সুইপ করার চেষ্টায় সফল হননি তিনি আফগানদের জোরাল আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দেন আম্পায়ার। যদিও জাকের আলীর পরামর্শে সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন মিরাজ। বলের লাইন লেগ স্টাম্প মিস করায় বাঁচেন তিনি। যদিও ৮৭ বলে ৬০ রান করা মিরাজকে থামান রশিদ খান। তার অফ স্টাম্প তাক করা বলটি কোনো টার্ন করেনি। সেটা ডিফেন্ড করতে গিয়েও ব্যর্থ হন মিরাজ। বল প্যাডে লাগলে আম্পায়ার আউট দেন। এবার রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। ৩৮.৫ ওভারে দলীয় ১৭৫ রানে পাঁচ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এদিকে টি-টোয়েন্টির পর প্রথম ওয়ানডেতেও ব্যর্থ হয়েছেন জাকের আলী অনিক। বাংলাদেশ ১৭৮ রানে হারায় ছয় উইকেট। রশিদের লেংথ ডেলিভারি মিডল স্টাম্প বরাবর আঘাত হানলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন জাকের। ফেরার আগে ১৬ বলে ১০ রান করেন তিনি। দলীয় দুইশর আগে ফিরলেন সোহানও। রশিদ খানের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। মিরাজ এবং জাকেরের মতো তিনিও লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হন। ফেরার আগে ১৪ বলে সাত রান করেন সোহান। যেখানে শেষ ৬৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছে সফরকারীরা। আফগানদের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন রশিদ খান ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই। টাইগার অধিনায়ক মিরাজকে ফিরিয়ে আফগানিস্তানের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে দুইশ উইকেটর মাইলফলক স্পর্শ করেছেন রশিদ।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.