আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করতে হবে আমরা অসুস্থ: আদালতে দিপু মনি

শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পরও কারাগারে ঠিকমত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি।

সোমবার সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করার পর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এসব অভিযোগ করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের এই নেত্রী। এ সময় তিনি মাস্ক, হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ছিলেন।

দীপু মনিকে আসামির কাঠগড়ায় রাখা হয় । তিনি মাথা নিচু করে থাকেন। পরে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিমের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। এর মধ্যেই দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল এজলাসে আসেন। গাজী ফয়জাল দীপু মনির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। বিচারক এজলাসে আসলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা দীপু মনিকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে শুরু করেন। পরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকীও দীপু মনিকে রিমান্ডে নেওয়ার সপক্ষে কথা বলতে শুরু করেন।

পিপি বলেন, মাননীয় আদালত, গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে হানিফ উড়ালসড়কের ঢালে মনির হোসেন নামের এক আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয় । এই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি দীপু মনি। হত্যাকাণ্ডের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল বলেন, মাননীয় আদালত, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দীপু মনি কোনোভাবে জড়িত নন। দীপু মনি গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে আজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে আদালতে এবং ১০ দিন রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আইনজীবী গাজী ফয়সালের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা দীপু মনি নিজেই আদালতে কথা বলার অনুমতি চান।

দীপু মনি বলেন, মাননীয় আদালত, আমি অসুস্থ। আমাকে আজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাকে নিয়ে আসা হলো আদালতে। আমাকে আবার ১০ দিন রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ। গত আগস্ট মাস থেকেই আমি অসুস্থ। আমার ব্রেন পরীক্ষার জন্য একবার কারাগার থেকে তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে আমার সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় আবার আমাকে কারাগারে নিয়ে আসা হয়। সেই থেকে আজ আমাকে পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাচ্ছে, কাল আমাকে পরীক্ষা করতে নিয়ে যাচ্ছে, এভাবেই ঘোরানো হচ্ছে আমাকে। আমাকে আর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না।

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর শারীরিক যে অবস্থা, তাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা জরুরি। কারাগারে কীভাবে আছেন, সে ব্যাপারে দীপু মনি আদালতের কাছে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মাননীয় আদালত, আমি গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছি। ১৫ দিন পরপর আমার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাই। কিন্তু আমার আইনজীবীদের সঙ্গে আমি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি না। এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছি, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি মাত্র তিনবার। আমার নামে ৬০টির অধিক মামলা। আমার আয়কর আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা খুব জরুরি। মামলার বিষয় নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গেই পরামর্শ করতে চাই। মামলার শুনানি শেষ হওয়ার পর আইনজীবীর সঙ্গে ২০ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করছি।

এ পর্যায়ে দীপু মনির বক্তব্যের বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেন, মাননীয় আদালত, একজন আসামিকে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। দীপু মনিকেও একইভাবে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর উনি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না, সেটি সঠিক নয়। কারণ, যখন ওনাদের আসামির কাঠগড়ায় আনা হয়, তখন তাঁরা তাঁদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। শুনানি শেষ হওয়ার পর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

পিপির বক্তব্যে দীপু মনি বলেন, মাননীয় আদালত, আপনি জানেন সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুন মারা গেছেন। আমি জেনেছি, ওনাকে চারবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, পরে তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। আমি বলছি, আমি অসুস্থ। আমার ব্রেন পরীক্ষার প্রয়োজন। আমার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করতে হবে আমরা অসুস্থ?

যদিও দীপু মনির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। উল্টো হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন রিমান্ড চান তিনি। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে দীপু মনির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.