জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি যেমন মিয়ানমারে, তেমনি এর স্থায়ী সমাধানও সেখানেই। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ‘সাহসী পদক্ষেপ’ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের কোনো পথ নেই।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে আয়োজিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রথম উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
গ্রান্ডি বলেন, ‘এই সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, আর সমাধানও সেখানেই।‘ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এখনো অনেকে রাখাইনে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন।
তিনি বলেন, ‘আজও রাখাইনে রোহিঙ্গারা বঞ্চনা, আতঙ্ক, গ্রেফতার, চলাচলের বিধিনিষেধ ও সীমিত সেবা পাওয়ার মধ্যে বাস করছে। পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।‘
বাংলাদেশের উদারতা ও সহানুভূতির প্রশংসা করে গ্রান্ডি বলেন, ‘১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়েছে, কীভাবে মানবিক সহায়তা দেওয়া যায়।‘ তবে তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘মানবিক সহায়তার তহবিলে ঘাটতি রয়ে গেছে। যথাযথ তহবিল ছাড়া পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি সহায়তা হ্রাস পেতে পারে, যা আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে।‘
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা তহবিল, শিক্ষা, শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকার ও পুনর্বাসনের সুযোগ বাড়ায়। তবে স্পষ্ট করে বলেন, ‘শুধু সহানুভূতি নয়, দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ।‘
গ্রান্ডি আরও বলেন, রাখাইন উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশ এখনো প্রাসঙ্গিক এবং সেটিই হতে পারে ‘স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের রোডম্যাপ’।
তিনি প্রভাবশালী দেশগুলোকে মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি আরাকান আর্মির সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে রাখাইনে মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হয় এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায্য সমাধান বেরিয়ে আসে।
শেষে গ্রান্ডি বলেন, ‘মিয়ানমারের জনগণের জন্য একটি বাস্তব, ন্যায়সঙ্গত ও ভবিষ্যৎমুখী অধ্যায় শুরু করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।‘



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.