বছরে ২ কোটি টনের বেশি খাবার অপচয় হয়: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

দেশে বছরে ২ কোটি টনের বেশি খাবার নষ্ট ও অপচয় হয় বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, কৃষকের খামার থেকে শুরু করে ভোক্তার টেবিলে পৌঁছানো পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টন খাবার অপচয় হয়। এর কারণ, কৃষকেরা খাদ্যপণ্য উৎপাদন করেন, কিন্তু সংরক্ষণ, দাম নির্ধারণ বা অবকাঠামোর অভাবে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য অপচয় হয়।

আজ সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ তথ্য জানান। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ ‘খাদ্যের অপচয় রোধের মাধ্যমে টেকসই খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের প্রথম পর্ব সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

ফরিদা আখতার আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মূল্যায়ন অনুযায়ী দেশে এখনো ১ কোটি ৫৫ লাখ থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এমন অবস্থায় দেশের একাংশে খাদ্যের অতিভোজন হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় খাদ্য নষ্ট হওয়া ও অপচয় অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয়।’

সরকার একদিকে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ও নিরাপদ করতে চেষ্টা করছে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণে খাদ্যপণ্য নষ্ট ও অপচয় হচ্ছে জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, ‘দুধ, ডিম, মাংস, মাছ—সব জায়গায় একই সমস্যা। যেমন চান্দিনায় আমি নিজে দেখেছি, কৃষকেরা দুধ নষ্ট করে ফেলে দিয়েছেন। কারণ, পাইকারি ক্রেতারা ন্যায্য দাম দিতে চাননি। আবার আলু উৎপাদন বাড়ালেও কৃষকেরা দাম পাচ্ছেন না।’

ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশসহ নির্দিষ্ট কিছু মাছ ধরতে গিয়ে বিপুল পরিমাণে মৎস্য সম্পদ নষ্ট হয়। প্রতিটি মাছ ধরার নৌযান যে পরিমাণে মাছ ধরে, তার দুই-তৃতীয়াংশই সমুদ্রে ফেলে দেয়। এতে জীববৈচিত্র্য ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে।

ফেলে দেওয়ার কারণ হিসেবে ফরিদা আখতার বলেন, এসব মাছের হয়তো স্থানীয় চাহিদা নেই কিংবা তাঁরা অনেক মাছ চেনেন না। আবার অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরায় অনেক প্রজাতির মাছ ও সামুদ্রিক জীব ধরা পড়ছে। যদি জেলেদের সচেতন করা যেত এবং এসব মাছের রপ্তানি বাজার খুঁজে বের করা যেত, তাহলে তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে আরও লাভবান হতেন।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হলেও এখনো অপুষ্টির সমস্যা রয়ে গেছে। খাদ্য বণ্টনে বৈষম্য আছে। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য অপচয় রোধ করা অত্যন্ত জরুরি।

সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ডেনমার্ক দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আন্দের্স কার্লসেন, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ দিয়া সানু, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জেসি উড, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইয়াসিন প্রমুখ।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.