মার্কিন বিমান নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের শেয়ারের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) কোম্পানির ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানের ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতা শিথিল করেছে, এমন খবরে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত বোয়িংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এই দুই মডেলের বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কারণে কোম্পানিটি কড়া নজরদারিতে ছিল।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিষয়টি হলো, মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার ১৮ মাসের কঠোর নজরদারি ও মূল্যায়নের পর ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বোয়িংকে কিছু ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের জন্য আবার নিরাপত্তা সনদ দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে।
একসময় বোয়িংয়ের এই ক্ষমতা ছিল। কিন্তু একের পর এক নিরাপত্তার ত্রুটি ও একাধিক দুর্ঘটনার কারণে বোয়িংকে নিজেদের কিছু বিমান মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপদ বলে সনদ দেওয়ার অনুমতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
সাধারণত বিমান নির্মাতাদের এফএএর পক্ষে কিছু কার্যক্রম করার অনুমতি দেওয়া হয়, যেমন ওড়ার উপযুক্ততা ও উৎপাদন সনদ। তবে বোয়িং এই দুই মডেলের ক্ষেত্রে সেই অনুমতি হারিয়েছিল।
মূলত বড় দুটি বিমান দুর্ঘটনার জেরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রাণঘাতী লায়ন এয়ারের দুর্ঘটনার জন্য ৭৩৭ ম্যাক্স ও ২০২২ সালে ইথিওপিয়ান এয়ার দুর্ঘটনার ৭৮৭–এর ক্ষেত্রে এই অনুমতি বাতিল করা হয়েছিল। জানুয়ারি ২০২৪ সালে ৭৩৭ ম্যাক্সের একটি দরজার প্লাগ ভেঙে যাওয়া এবং এরপর সরকারি তদন্তে যে বিব্রতকর সত্য বেরিয়ে আসে, তার জেরে বোয়িং চাপে পড়ে।
এরপর ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের সব বিমান ২০ মাসের মতো বসিয়ে রাখতে হয়েছে। তখন তারা বিমানের মান ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে বড় পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। এ ঘটনায় ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বোয়িংয়ের প্রায় ৩৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পরিচালন ক্ষতি হয়। খবর গণমাধ্যম।
তবে এফএএ নিরাপত্তা সনদ দেওয়ার ক্ষমতা এখনই বোয়িংয়ের কাছে সম্পূর্ণভাবে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত নয়। গতকাল সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রতি দুই সপ্তাহে একবার বোয়িং বিমান ওড়ার উপযুক্ততা সনদ দিতে পারবে। অন্য সময় সংস্থাটি নিজেই সনদ দেবে।
এফএএ বিবৃতিতে বলেছে, ‘নিরাপত্তাই আমাদের মূলকথা। এফএএ কেবল তখনই এই পদক্ষেপ অনুমোদন করবে, যখন নিশ্চিত হওয়া যাবে, বিষয়টি নিরাপদভাবে করা সম্ভব।’ বোয়িংয়ের চলমান উৎপাদন মানের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় আরও বেশি নজরদারি করার সুযোগ দেবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পরিবর্তনগুলোর পরেও সংস্থা বোয়িংয়ের উৎপাদনের প্রক্রিয়ার ‘সরাসরি ও কঠোর নজরদারি’ বজায় রাখবে। গত দেড় বছরে কয়েকজন হুইসেলব্লোয়ার বোয়িংয়ের নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণের ত্রুটিগুলো সামনে এনেছেন। এর মধ্যে ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৮৭–এর উৎপাদনের প্রক্রিয়াও রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের বিচার বিভাগ মনে করত, বোয়িংয়ের বিমানে যেসব নিরাপত্তার ত্রুটি হচ্ছে, সেগুলো নিরাপত্তাজনিত আগের এক চুক্তির লঙ্ঘনের কারণে হচ্ছে। এরপর বোয়িং গত বছর সেই দুই প্রাণঘাতী ৭৩৭ ম্যাক্স দুর্ঘটনার জন্য দোষ স্বীকার করতে রাজি হয়েছিল, যে দুটি দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জন নিহত হয়েছিলেন।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের বিচার বিভাগ এই ফৌজদারি মামলা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। করপোরেটদের অপকর্মের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান যে শিথিল, এটি তার আরেকটি উদাহরণ।
বিক্রি বাড়ছে
সম্প্রতি টার্কিশ এয়ারলাইনস ও নরওয়েজিয়ান গ্রুপের কাছ থেকে নতুন বিমান সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছে বোয়িং। ইন্দোনেশিয়া ও জাপান বোয়িংয়ের শত শত যাত্রীবাহী বিমান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে বছরের শুরুতে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতার বোয়িংয়ের বিমান কেনার ঘোষণা দেয়।
বিষয়টি হলো, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যেসব বাণিজ্যচুক্তি করছে, তার অংশ হিসেবে বোয়িং ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন বিমান সরবরাহের কার্যাদেশ পাচ্ছে। এ ধরনের বিক্রি বোয়িংয়ের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। কেননা, কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে নানা সংকটে আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করতে পারেন, তাঁর ব্যতিক্রমী বাণিজ্যের নীতি মার্কিন উৎপাদন খাতের পালে হাওয়া দিচ্ছে।
এদিকে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর–কষাকষির অংশ হিসেবে বাংলাদেশও বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দুই এয়ারলাইনসের সঙ্গে চুক্তি ও তার সঙ্গে এফএএর কিছু নিরাপত্তা সনদ পুনর্বহালের পদক্ষেপে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। এ বাস্তবতায় বিশ্লেষকেরা বোয়িংয়ের ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেখছেন। যদিও গত কয়েক বছরে বোয়িং যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, তাতে সামনে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.