নিউ ইয়র্কে নেতানিয়াহু বিরোধী বিক্ষোভ, নিষেধাজ্ঞার দাবি

ফিলিস্তিনে চলমান আগ্রাসনের জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সময় অনেক দেশের প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানিয়ে অধিবেশন কক্ষ বর্জন করেন। একই সাথে নেতানিয়াহুর বিরোধিতা করে রাস্তায় নামে হাজারো নিউ ইয়র্কবাসী।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ ভবনের কাছে টাইমস স্কয়ারের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

এসময়  হেগ গ্রুপের বৈঠকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে আলোচনা করেন। প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় চলা হামলার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

নিউ ইয়র্কের প্রতিবাদে অংশ নেওয়া আল-শরিফ নাসেফ বলেন, নেতানিয়াহু এখানে এসেছেন, অথচ দ্য হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তাকে জবাবদিহি করা উচিত ছিল। আইসিসি গত বছর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

তিনি বলেন, “এখানে উপস্থিত প্রত্যেক নিউ ইয়র্কবাসী তার গ্রেফতারকে সমর্থন করেন। তিনি এখানে স্বাগত নন।”

তিনি আরও বলেন, “ইনশাল্লাহ, নতুন মেয়রের অধীনে তিনি নিউইয়র্ক সিটিতে পা রাখলেই গ্রেফতার হবেন।”

এই মাসের শুরুতে নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয়, তাই নিউ ইয়র্ক পুলিশ আদৌ তাকে আটক করার আইনি ক্ষমতা রাখে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

নেতানিয়াহুর বক্তব্য শেষে বিক্ষোভকারীরা টাইমস স্কয়ার থেকে জাতিসংঘ সদর দফতরের কাছে ইস্ট রিভারের একটি পার্কের দিকে পদযাত্রা করে।

তারা ফিলিস্তিনের পতাকা নেড়ে “ফ্রি প্যালেস্টাইন” এবং “অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা চাই” স্লোগান দিতে দিতে অগ্রসর হয়, যেখানে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল।

কিছু বিক্ষোভকারী কলোম্বিয়া ও আয়ারল্যান্ডের পতাকাও বহন করে—যে দুই দেশ প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে।

ফিলিস্তিনি ইয়ুথ মুভমেন্ট – এনওয়াইসি’র সদস্য নাসরিন ইসা বলেন, এই বিপুল সমাবেশ যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, নেতানিয়াহুকে লাল গালিচা দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক ফল না এলেও প্রতিবাদ বাস্তব পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মেগান ফ্রেডেট একটি কার্ডবোর্ড প্ল্যাকার্ড ধরে রাখেন, তাতে লেখা ছিল: “শিশুখাদ্য কি হামাস???”। এর মাধ্যমে তিনি গাজায় ইসরায়েলের খাদ্যপণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ জানান, যা জাতিসংঘ-সমর্থিত এক সংস্থার মতে প্রাণঘাতী দুর্ভিক্ষ ডেকে এনেছে।

ফ্রেডেট বলেন, একজন নিউ ইয়র্কবাসী হিসেবে নেতানিয়াহু তার শহরে উপস্থিত থাকায় তিনি “ঘৃণা” ও “ক্ষোভ” বোধ করছেন।

বিক্ষোভকারীরা যখন জাতিসংঘ ভবনের নিরাপত্তা সীমানার কাছে পৌঁছায়, তখন হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভকারী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইসরায়েলি ও ইহুদিদের মুখোমুখি হন তারা। তবে পুলিশ দুই পক্ষকে আলাদা করে দেয় এবং ইসরায়েলপন্থি সমাবেশকে ব্যারিকেডের ভেতর সীমাবদ্ধ রাখে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভেতরে, নেতানিয়াহু যখন বক্তব্য দেন, হল আংশিক খালি ছিল। তার বক্তব্য শেষে করতালির শব্দ কেবল একপাশ থেকেই শোনা যায়।

নেতানিয়াহুর দফতর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দাবি করে যে, গাজাবাসীর ফোন হ্যাক করে তার বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

বার্তায় বলা হয়, “অভূতপূর্ব এক পদক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন যে ইসরায়েলি সেনারা গাজার অধিবাসী ও হামাস সদস্যদের ফোনের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং এখন তার ভাষণ সরাসরি সেখানে সম্প্রচার করা হচ্ছে।”

শুক্রবার ৩৪ দেশের কূটনীতিক— যারা হেগ গ্রুপের সদস্য— ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতীকী বিবৃতি ছাড়াও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে শিশুদের মৃত্যু অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনি শিশুরা নিহত হচ্ছে, অনাহারে মারা যাচ্ছে, অনাথ হচ্ছে, পুড়ছে, মানসিক আঘাত পাচ্ছে। পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, জীবন ধ্বংস হচ্ছে, জমি দখল হচ্ছে, ভূখণ্ড দখল হচ্ছে।”

বৈঠকে কলোম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার, তুরস্ক, মেক্সিকো, সৌদি আরব, ব্রাজিল, আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও উরুগুয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.