বাংলাদেশে প্রদত্ত মোট ঋণের প্রায় ৭৮ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত, যার ফলে দেশের অন্যান্য অংশ আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে পিআরআই সম্মেলন কক্ষে “বাংলাদেশ কি বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব?” শীর্ষক একটি নিবন্ধ উপস্থাপনকালে এই গবেষণার মূল তথ্যগুলো তুলে ধরা হয়।
পিআরআই পরিচালক ড. আহমদ আহসান বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র। জনসেবা, নগর শাসনব্যবস্থা এবং অর্থপ্রবাহ—সবক্ষেত্রেই এ চিত্র দেখা যায়।”
তিনি জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রদত্ত ঋণের ৭৮ শতাংশ জারি করা হয়, যেখানে দেশের অন্য জেলায় ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা (এসএমই) ঋণ পেতে মারাত্মক সমস্যায় পড়ছেন। এই আর্থিক একচেটিয়াত্ব নতুন উদ্যোগ সৃষ্টি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক ভারসাম্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়, ব্যাংকিং খাত সম্প্রসারিত হলেও সেটির সুবিধা ভৌগোলিকভাবে সমানভাবে ছড়ায়নি। ঢাকার বাইরে এসএমই খাত দুর্বল, কারণ ব্যাংক ঋণ ও সেবার বেশিরভাগই ঢাকাকেন্দ্রিক থেকে গেছে।
ফলে ২০১৭-২০২২ সালের মধ্যে নগর শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী (২০১০-২০১৭) সময়ের তুলনায় কমে গেছে। এর প্রভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্পায়নের সম্ভাবনাও সংকুচিত হয়েছে।
পিআরআই আরও জানিয়েছে, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৫টি পৌরসভা বর্তমানে ৪০টিরও বেশি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে পরিচালিত হয়। এতে মেয়ররা অবকাঠামো, পানি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোনও সমন্বিত ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
গবেষণায় যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে, তা হলো: স্থানীয় সরকার খাতে বরাদ্দ জিডিপির কমপক্ষে ১ শতাংশ করা, ঢাকা ও চট্টগ্রামে সম্পদ কর আদায় শক্তিশালী করা, যেখানে বর্তমানে তা যথাক্রমে জিডিপির মাত্র ০ দশমিক ১৩ শতাংশ ও ০ দশমিক ০৬ শতাংশ, স্থানীয় সরকারগুলোর বার্ষিক স্কোরকার্ড চালু করা—সেবা, বিনিয়োগ পরিবেশ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার মান যাচাইয়ের জন্য।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বাদিউল আলম মজুমদার বলেন, “জবাবদিহিতা বাড়াতে হলে জনগণের মাধ্যমে করতে হবে। এজন্য বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য। এটা শুধু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নয়, সুবিধারও বিকেন্দ্রীকরণ।”
তিনি আরও বলেন, “মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে—এই সব উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু মানুষের জীবনমান উন্নত হয়নি। প্রকৃত উন্নয়ন মানে মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনমানের উন্নয়ন।”
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.