এলডিসি উত্তরণের পর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত থাকবে হবে: অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) উত্তরণের পর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন এলডিসি উত্তরণ নিয়ে আলোচনা চলছে। আমি বিস্তারিত কিছু বলছি না, তবে ব্যবসায়ীদের বলব- আপনারা নিজেদের প্রস্তুত করুন। তারিখ নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত হবে না, কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং স্থানীয় বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। সরকার অবশ্যই নীতিগত সংস্কার, প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং প্রাথমিক সহায়তার মাধ্যমে ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে।

তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কেবল সরকারের ওপর নির্ভর করা যাবে না; কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈশ্বিক প্রসারে নেতৃত্ব নিতে হবে বেসরকারি খাতকেই।

অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাতের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ও উদ্যমের প্রশংসা করে বলেন, পারফরম্যান্স সত্যিই ভালো। এটি এখন কেবল স্থানীয় ব্যবসা নয়- এটি বৈশ্বিক ব্যবসায় রূপ নিচ্ছে। আমাদের পণ্য ও সেবা বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি বিস্মিত হয়েছিলাম যখন ফিজির একটি দোকানে প্রাণ চানাচুর দেখেছিলাম। এভাবেই বাংলাদেশ বহুদূরে পৌঁছে যাচ্ছে। এ ধরনের অর্জন বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কৃতিত্ব।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, সরকার কেবল কিছু নির্দিষ্ট খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। প্রকৃত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বেসরকারি খাতের বিকাশের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি মার্কিন চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি আমাকে বলেছেন- মার্কিন বেসরকারি খাত বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে খুশি। আমি তাদের বলেছি- আমরা শেভরন ও মেটলাইফের মতো প্রতিষ্ঠানের বকেয়া প্রায় ৪০ লাখ ডলার পরিশোধ করেছি। এটা আমার ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, এটা রপ্তানিকারক ও উদ্যোক্তাদের অর্থ দিয়েই পরিশোধ করা হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভালো ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে।

আর্থিক চাপের মধ্যেও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অনেকেই আমাকে বলেন: কর বাড়ান, কর কমান, নগদ সহায়তা দিন। কিন্তু সব কিছু একসঙ্গে করলে আমাদের মতো সীমিত সম্পদের দেশে সমস্যা হবে। তবে ব্যবসাবান্ধব থাকতে হবে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এলে যেন সংস্কারের পথে বাধা সৃষ্টি না করে। দয়া করে একসঙ্গে কাজ করুন, আমরা সবসময় আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা একমত যে কর্মসংস্থান তৈরি করবে বেসরকারি খাত। সরকার কেবল সীমিত কিছু ক্ষেত্রে চাকরি দিতে পারে। গত ১১–১২ মাসে কর্মসংস্থানের তেমন উন্নতি হয়নি, ব্যবসাও দ্রুত বাড়েনি। ফলে কর্মসংস্থান কিছুটা স্থবির থেকেছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও প্রভাব ফেলেছে।

দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে অসামান্য অবদান রাখায় ‘বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার ২০২৪’ পুরস্কার পেয়েছেন শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএল-এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী।

তিনি ছাড়াও দেশের ৫ ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করা হয়। ‘বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’ শীর্ষক এ পুরস্কার দিয়েছে আন্তর্জাতিক লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান ডিএইচএল ও ইংরেজি দৈনিক এক গণমাধ্যম।

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, গণমাধ্যম সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও ডিএইচএল এক্সপ্রেস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিয়ারুল হক।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.