যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ দাবি মানলে দক্ষিণ কোরিয়ায় সংকট হবে: প্রেসিডেন্ট লি

স্থগিত বাণিজ্য আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বিনিয়োগ দাবি মেনে নিলে দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৯৭ সালের মতো এক ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

লি জানান, জুলাইয়ে সিউল ও ওয়াশিংটন মৌখিকভাবে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়। যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত শুল্ক কমাবে, বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করতে হবে। তবে বিনিয়োগের ধরন ও শর্ত নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে এখনো লিখিত চুক্তি হয়নি।

লি বলেন, “কারেন্সি সোয়াপ ছাড়া যদি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দাবিমতো ৩৫০ বিলিয়ন ডলার নগদে সরিয়ে সেখানে বিনিয়োগ করি, তবে দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৯৭ সালের আর্থিক সংকটের মতো পরিস্থিতিতে পড়বে।”

আগামী সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট লি। তিনি প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদের সভায় সভাপতিত্বও করবেন। তবে সফরসূচিতে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক নেই, এজেন্ডায় নেই বাণিজ্য আলোচনাও।

লি বলেন, তার উদ্দেশ্য হলো বিশ্বকে জানানো যে ‘গণতান্ত্রিক কোরিয়া ফিরে এসেছে।’ জুনে স্ন্যাপ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন তিনি। তার রক্ষণশীল পূর্বসূরি ইউন সুক ইয়োল সামরিক আইন জারির কারণে অপসারিত হয়ে কারাগারে আছেন।

অগাস্টে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম শীর্ষ বৈঠকে কোনো যৌথ বিবৃতি না হলেও লি দাবি করেন, তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক মজবুত হয়েছে।

এই মাসে জর্জিয়ায় হুন্ডাই মোটরের ব্যাটারি কারখানায় অভিযান চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ ৩০০-র বেশি কোরিয়ান শ্রমিককে আটক করে। ট্রাম্প প্রশাসন শ্রমিকদের হাতকড়া পরা ছবিও প্রকাশ করে, যা দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

লি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ানরা স্বাভাবিকভাবেই কঠোর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে তিনি মনে করেন, এটি ট্রাম্পের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত নয়, বরং অতিউৎসাহী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং ভবিষ্যতে যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে। এমনকি ট্রাম্প শ্রমিকদের থাকতে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন। লি বলেন, এ ঘটনায় দুই দেশের মিত্রতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

এদিকে, মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছেন, দক্ষিণ কোরিয়াকে জাপানের মতোই একটি চুক্তি মেনে নিতে হবে, নতুবা শুল্ক দিতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করে, এ শুল্ক বিদেশি সরকারগুলোই দিচ্ছে, যদিও বাস্তবে তা পরিশোধ করে মার্কিন আমদানিকারকেরা।

লুটনিকের এ মন্তব্যের বিষয়ে লি বলেন, “রক্তের মতো সম্পর্কিত মিত্রদের মধ্যে ন্যূনতম যুক্তিবোধ বজায় থাকবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।”

দক্ষিণ কোরিয়া প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বৈদেশিক মুদ্রা সোয়াপ লাইন খোলার, যাতে বিনিয়োগের ধাক্কা স্থানীয় বাজারে কমে। জাপানের সঙ্গে তুলনা করে লি বলেন, টোকিওর বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিগুণের বেশি। ইয়েন আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সোয়াপ লাইনও আছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পরিস্থিতি ভিন্ন।

লি বলেন, দুই দেশ লিখিতভাবে সম্মত যে যে কোনো বিনিয়োগ প্রকল্প বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হতে হবে। কিন্তু বিশদ শর্ত ঠিক করা এখন সবচেয়ে বড় কাজ এবং একইসঙ্গে সবচেয়ে বড় বাধা। বর্তমান প্রস্তাবগুলো বাণিজ্যিক যুক্তিসঙ্গততা নিশ্চিত করছে না।

প্রতিরক্ষায় দক্ষিণ কোরিয়ার বাড়তি অবদান নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই বলে জানান লি। তবে ওয়াশিংটন নিরাপত্তা ও বাণিজ্য আলোচনাকে আলাদা রাখতে চায়। “আমাদের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে হবে,” বলেন লি।

লি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছেন, তবে পিয়ংইয়ং ইতিমধ্যেই তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। লি বলেন, আপাতত আন্তঃকোরীয় আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি আশাবাদী নন।

তিনি ট্রাম্পকে উৎসাহ দিয়েছেন আগামী মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া-প্যাসিফিক সম্মেলনে কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করতে। তবে সিউলের কাছে এখনো ওয়াশিংটন-পিয়ংইয়ং আলোচনার কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই।

কিম জং উন, ভ্লাদিমির পুতিন ও শি জিনপিংয়ের মদ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে লি বলেন, এখন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর জোট ও পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জোট মুখোমুখি অবস্থানে। দক্ষিণ কোরিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝখানে ফেলছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা যত বাড়ছে, চীন-রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠতাও তত বাড়ছে। এটি কোরিয়ার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি। ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনা থেকে বেরিয়ে আসতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপায় বের করার আহ্বান জানান তিনি।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.