জুলাইয়ের মতো আগস্ট মাসেও দেশের ব্যাংক খাতে কলমানি বাজারে অর্থাৎ অবৈধ লেনদেন হয়েছে লাখো কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগস্টে কলমানি বাজারে মোট লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। এর আগের মাস জুলাইয়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা।
তবে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে লেনদেন কমেছে ৭২৭ কোটি টাকা, যা প্রায় ০ দশমিক ৬২ শতাংশ। তারল্য সংকটের কারণেই মূলত এই বিশাল লেনদেন হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসের মধ্যে জানুয়ারি, মে, জুলাই ও আগস্ট এই চার মাসে কলমানি লেনদেন ছাড়িয়েছে লাখো কোটি টাকা।
কলমানি হলো একটি আন্তঃব্যাংক ঋণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, যেখানে নগদ টাকার অভাবে ভোগা ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে অন্য ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদে ঋণ নেয়। এই ঋণের ওপর সুদ নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। প্রতিদিনের লেনদেন ও সুদের হার বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তা নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে।
স্বল্প মেয়াদি ধারেই বেশি লেনদেন
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, আগস্টে কলমানিতে মোট লেনদেনের ৮৮ শতাংশই ছিল ওভার নাইট ধার বা এক দিনের জন্য। এই এক দিনের ধারের পরিমাণ ছিল ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি। এটি গত ১৪ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো এক দিনের জন্য ধারে লাখো কোটি টাকা ছাড়ানোর ঘটনা।
অন্যদিকে শর্টনোটিশ (২–১৪ দিন) ধারে লেনদেন হয়েছে ১২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা এবং মেয়াদি (১৫ দিন–১ বছর) ধারে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। এই দুই ধরনের ধারের পরিমাণও জুলাইয়ের তুলনায় কমেছে।
ওভার নাইট ধারের গড় সুদ হার আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা জুলাইয়ের ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ থেকে ৫ বেসিস পয়েন্ট কম।
ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১৪–১৫টি ব্যাংক বর্তমানে চরম তারল্য সংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না, অথচ দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের অন্য ব্যাংক থেকে ধার নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
অন্যদিকে ভালো অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলোর প্রতি আমানতকারীদের আস্থা বাড়ায় সেসব ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি হলেও, মাঝারি ও দুর্বল ব্যাংকগুলোতে তেমন প্রবৃদ্ধি নেই। এই কারণেও তারা কলমানির ওপর নির্ভর করছে।
গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে ব্যাংক খাত নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান মাসরুর আরেফিন বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকা মন্দ ঋণ এবং ৭ লাখ কোটি টাকা সমস্যাপূর্ণ অবস্থায় (ডিট্রেসড)।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ১৫টি ব্যাংককে “লুট হওয়া ব্যাংক” বলা হচ্ছে। এর মধ্যে ৭টি সরাসরি এবং বাকি ৬–৭টি ব্যাংক পরোক্ষভাবে লুট হয়েছে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, তারল্য সংকট এতটাই গভীর যে অনেক আমানতকারী প্রয়োজনের সময় টাকা তুলতে পারছেন না। এটিকে ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.