অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তামাকের ক্ষতি বহুমাত্রিক। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কার হলে এটি হবে সরকারের জন্য একটি সিগনেচার রিফর্ম।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘তামাকমুক্ত প্রজন্ম: আইন শক্তিশালীকরণে নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এটি আয়োজন করে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)।
গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়, তামাক বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমানোর লক্ষ্য অর্জনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তামাক। দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকজনিত কারণে মারা যান। এ বিপুল মৃত্যু কমানো, এসডিজি অর্জন এবং তামাকমুক্ত প্রজন্ম গড়তে আইন শক্তিশালীকরণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই—এমনটাই মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ, ডাক্তার, জনস্বাস্থ্যবিদ ও সাংবাদিকরা।
বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে তামাকের ছোবল থেকে বাঁচাতে শক্তিশালী, হস্তক্ষেপমুক্ত আইন ও কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি।
বক্তারা বলেন, সুস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই কৃষি, মানসম্মত শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের মতো অধিকাংশ এসডিজি লক্ষ্য পূরণে তামাক একটি অন্তরায়। এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২১ সালে এফসিটিসি অনুযায়ী আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন উপদেষ্টা কমিটি খসড়া সংশোধনীতে পরিমার্জনের কাজ করছে। তবে তামাক কোম্পানিগুলো এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে চলেছে। বক্তারা কোনো প্রকার অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হয়ে সংশোধনীটি দ্রুত পাসের দাবি জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “তামাকের ক্ষতি বহুমাত্রিক। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কার হলে এটি হবে সরকারের জন্য একটি সিগনেচার রিফর্ম।”
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, “আমরা ভুক্তভোগীদের আর্তনাদ শুনলাম। এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমরা আর শুনতে চাই না।”
পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কোনো বিকল্প নেই।”
বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের বলেন, “আইন সংশোধনে গণমাধ্যম শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে, যা অব্যাহত রাখতে হবে।”
বিআইআইএসএস-এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “আইন সংশোধনের সঙ্গে রাজস্ব কমার কোনো সম্পর্ক নেই। জনস্বার্থেই আইনটি দ্রুত পাস করতে হবে।”
অধ্যাপক ডা. অনুপম হোসেন বলেন, “ই-সিগারেট বা ভেপিং পণ্য তামাকের মতোই ক্ষতিকর। সেগুলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।”
বক্তব্য দেন আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের এবং অন্যান্য তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায়, মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
প্রসঙ্গত, প্রণীত খসড়া সংশোধনীতে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্তকরণ, তামাক পণ্যের প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ, কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা, খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ, ই-সিগারেট ও ভেপিংসহ আধুনিক তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.