দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে এবং সম্প্রতি খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। একইসঙ্গে আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানি করলেও ভোক্তাদের ওপর এর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এই প্রেক্ষাপটে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা নির্ভর করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা ঘাটতি কমাতে কী ধরনের আমদানি করবে, সেটাও তাদের দেখার বিষয়। তবে বর্তমানে আমরা মোটামুটি একটি আরামদায়ক অবস্থানে আছি।
আমেরিকা থেকে পণ্য আনতে ভিয়েতনামের তুলনায় বেশি খরচ হবে কি না, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, কিছুটা বাড়তি খরচ হবেই। উদাহরণস্বরূপ, গমের ক্ষেত্রে আমদানি মূল্য কিছুটা বেশি হলেও এর মান অনেক ভালো। আমরা ট্যারিফ এড়িয়ে চলতে চাইছি এবং ঘাটতি কমাতে চাইছি, তাই কিছু বাড়তি ব্যয় মেনে নিতে হবে।
ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “না না, ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে না। আমরা তো এমনিতেই ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে অনেক চেষ্টা করেছি। টিসিবি ও অন্যান্য মাধ্যমে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।”
মূল্যস্ফীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতিতে এখনও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে বড় সমস্যা পাইকারি ও খুচরা বাজারে। তারা যেন অর্থনীতির ধারাকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কম দেখা যায়। আমাদের মূল্যস্ফীতি মোটামুটি স্থিতিশীল, এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে।”
বেকারত্ব পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে বলে অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করেছেন—এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “তারা যে বিশেষণ ব্যবহার করেছেন, সেটা এখানে প্রযোজ্য নয়। তবে কর্মসংস্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ কর্মসংস্থান তৈরি হয় মূলত বেসরকারি খাতে। ব্যবসা-বাণিজ্য মন্থর হলে কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়ে। তবে একে ভয়াবহ বলা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য করা হয়েছে। আমরা এই বিষয়ে সচেতন আছি।”
ব্যবসা-বাণিজ্য মন্থর হয়েছে কি না—এ প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “ব্যবসা মাঝখানে কিছুটা মন্থর ছিল, তবে এখন আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।”
ট্যাক্স সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, “ট্যাক্স নিয়ে আমরা যথাসম্ভব ব্যবহার করছি। আইনজীবীদের সময় দিয়েছি যেন তারা দ্রুত কাজ শেষ করেন। অনেকেই ট্যাক্স ফরম পূরণ করতে পারেন না, সেখানে সামান্য ফি দিয়ে আইনজীবীদের সাহায্য নিতে পারলে সেটা তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে।”
রাজনৈতিক কোনো আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ক্রয় কমিটিতে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। তবে অর্থনীতির কিছু দিক নিয়ে আলোচনা হয়। আমরা অর্থনীতিকে মোটামুটি সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।”
বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আজ অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ ও সরকারি ক্রয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন, এলএনজি আমদানি এবং সারের (এমওপি, ইউরিয়া) ক্রয় অনুমোদন। জেনারেশনের চেয়েও উপকেন্দ্রগুলোর সমস্যা বেশি, কারণ সিস্টেম ডিস্ট্রিবিউশনই বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব উপকেন্দ্র স্থাপনে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.