বৈশ্বিক জাহাজ ভাঙা শিল্পে শীর্ষস্থানে ওঠার লড়াইয়ে নামছে ভারত। আর এই খাতে শীর্ষস্থান দখলে থাকা বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে নতুন পরিকল্পনা নিচ্ছে দেশটি।
মূলত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কাছ থেকে বাজার ফিরে পেতে জাহাজ ভাঙা খাতে বড় অংকের প্রণোদনা ঘোষণা করতে যাচ্ছে ভারত। ২০২৬ সাল থেকে শুরু হয়ে এ সুবিধা দেওয়া হবে পরবর্তী দশ বছর ধরে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় একটি গণমাধ্যম বিজনেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
গণমাধ্যমটি বলছে, ভারত তাদের জাহাজ ভাঙা শিল্পকে চাঙা করতে ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি রুপি প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কাছ থেকে বাজার অংশীদারিত্ব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র।
সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানায়, এই আর্থিক সুবিধা ২০২৬ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী দশ বছর ধরে দেওয়া হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভা চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষ নাগাদ প্রস্তাবটি অনুমোদন করতে পারে।
প্রণোদনা প্যাকেজের অধীনে জাহাজ মালিকরা পুরোনো জাহাজ ভারতে নিয়ে এলে স্ক্র্যাপ মূল্যের প্রায় ৪০ শতাংশ সমপরিমাণ ক্রেডিট নোট পাবেন। এই নোট তিন বছর পর্যন্ত বৈধ থাকবে এবং ভারতে নির্মিত জাহাজ কিনতে তা ব্যবহার করা যাবে। মালিকরা চাইলে একাধিক নোট একত্রে ব্যবহার করতে পারবেন বা বিক্রিও করতে পারবেন।
এই আর্থিক সহায়তার মূল লক্ষ্য বৈশ্বিক জাহাজ পুনর্ব্যবহার খাতে ভারতের অবস্থান আরও মজবুত করা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ভাঙা জাহাজের এক-তৃতীয়াংশ এসেছে ভারতের ভাগে, যেখানে বাংলাদেশ এককভাবে দখলে রেখেছে ৪৬ শতাংশ।
তবে প্রস্তাবিত এই প্রণোদনার বিষয়ে ভারতের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো কোনো মন্তব্য করেনি।
গণমাধ্যমটি জানায়, এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত আলাং শিপইয়ার্ডের জন্য বিখ্যাত, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ ভাঙার স্থান। ভারতের জাহাজ ভাঙা ব্যবসার ৯৮ শতাংশই এখান থেকে আসে। কিন্তু সস্তা ও পর্যাপ্ত শ্রমশক্তির কারণে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ভারতের বাজারের বড় অংশ দখল করে নিচ্ছে।
তবুও সম্প্রতি ব্যবসা কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর তেলের ট্যাঙ্কার ভাঙা কমে যাওয়ায় দীর্ঘসময় ধরে এই খাত মন্দায় ছিল। সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিভিন্ন ধরনের জাহাজের রুট পরিবর্তন ও ভাড়াও বৃদ্ধি পায়। এতে মালিকরা পুরোনো জাহাজের জীবনকাল যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নিচ্ছেন।
সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি আরও জানায়, বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা সরিয়ে আনতে ভারত তার পূর্ব উপকূলে নতুন একটি জাহাজ ভাঙার ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনাও করছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার চলতি মাসেই ২৫০ বিলিয়ন রুপি সমপরিমাণ সামুদ্রিক উন্নয়ন তহবিল অনুমোদন করতে যাচ্ছে। দেশীয় জাহাজ নির্মাণকে উৎসাহিত করা ও বিদেশি জাহাজের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোই এর লক্ষ্য।
এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত এ তহবিল ২০২৬ সালের মার্চ শেষে শেষ হওয়া বাজেট বর্ষের আওতায় রাখা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ শব্দসমূহ:
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.