সিঙ্গাপুরে ধনী চীনা নাগরিকদের আগ্রহ কমছে

একসময় চীনের মূল ভূখণ্ডের ধনী পরিবারের কাছে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত ছিল সিঙ্গাপুর। তবে সাম্প্রতিক কঠোর নীতিমালার কারণে সেই সুনাম এখন ম্লান হতে শুরু করেছে।

২০১৯ সালের পর হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন এবং বেইজিংয়ের কঠোর নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর চীনের অনেক ধনী পরিবার সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নিতে শুরু করে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পরিবারভিত্তিক বিনিয়োগ কাঠামো, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও মান্দারিন ভাষার ব্যবহারের কারণে সিঙ্গাপুর তাদের কাছে পছন্দনীয় হয়ে উঠেছিল।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

কিন্তু ২০২৩ সালে আলোচিত ৩০০ কোটি সিঙ্গাপুরি ডলারের অর্থ পাচার কেলেঙ্কারি ‘ফুজিয়ান কেস’ সামনে এলে, দেশটির ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কঠোর পদক্ষেপ নেয়। এতে নিয়মকানুন কঠোর হওয়ায় ধনী চীনা নাগরিকরা অন্য দেশে যাওয়ার পথ খুঁজতে থাকেন।

আইনি প্রতিষ্ঠান বে-ফ্রন্ট লর–এর পরিচালক রায়ান লিন জানান, এই ঘটনার পর অনেকেই হংকং, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা জাপানে চলে গেছেন। ২০২২ সালের তুলনায় এখন মূল ভূখণ্ড চীন থেকে সিঙ্গাপুরে ফ্যামিলি অফিস বা স্থায়ী আবাসন স্থাপনের আবেদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে।

২০২৫ সালে চালু হওয়া নতুন বিধানে ক্রিপ্টোকারেন্সি, স্টেবলকয়েন এবং টোকেনাইজড ইকুইটি জাতীয় ডিজিটাল পণ্যের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়। এই লাইসেন্স পেতে আড়াই লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার মূলধন রাখা, কঠোর মানি লন্ডারিংবিরোধী আইন এবং প্রযুক্তিগত ঝুঁকি নীতিমালা মানতে হয়। ফলে ক্রিপ্টো খাতের বিনিয়োগকারীরা সিঙ্গাপুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

রায়ান লিন বলেন, “নতুন আইনের কারণে চীনারা বলছেন, ‘আর কুলাচ্ছে না, ধৈর্য শেষ।’”

সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (এমএএস) অবশ্য জানিয়েছে, অর্থ পাচার রোধে তাদের নিয়ন্ত্রণ নীতির মানদণ্ড পাল্টায়নি। তাদের মতে, বৈধ সম্পদ সিঙ্গাপুরে স্বাগত, তবে নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহির বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে।

করপোরেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান জেঙ্গার–এর প্রতিষ্ঠাতা আইরিস শু জানান, থ্রি অ্যারোজ ক্যাপিটাল ও এফটিএক্স বিপর্যয়ের পর ২০২৪ সালে সিঙ্গাপুরে ব্যাপক কড়াকড়ি শুরু হয়। ব্যাংকগুলো ফ্যামিলি অফিস পুনর্মূল্যায়ন করে এবং অনেক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়, যার ফলে ধনী চীনা গ্রাহকরা বিপাকে পড়েন।

এছাড়া ফ্যামিলি অফিস ও স্থায়ী বসবাসের আবেদনকারীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পটভূমি প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা অনেকেই ‘অনধিকারচর্চা’ মনে করছেন।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স–এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সিঙ্গাপুরে ধনীদের অভিবাসনের হার অর্ধেকে নেমে আসবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর মাত্র ১,৬০০ জন মিলিয়নিয়ার সিঙ্গাপুরে যাবেন, যেখানে ২০২৪ সালে অনুমান ছিল ৩,৫০০ জন।

অন্যদিকে হংকং এখন করছাড় ও স্থায়ী বসবাসের শর্ত শিথিল করে ধনীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।

রায়ান লিন বলেন, “অনেক ধনী চীনা নাগরিক ভুলে গেছেন, কেন তাঁরা সিঙ্গাপুরে এসেছিলেন।” তরুণ প্রজন্ম আবার হংকং বা দুবাইয়ের নৈশ জীবন ও উন্মুক্ত সামাজিক পরিবেশ বেশি পছন্দ করছেন।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের গ্রুপ প্রধান ডমিনিক ভোলেক বলেন, “কঠোর নিয়ম, বাড়তি তদারকি ও সামাজিক পরিবর্তন তাঁদের গোপনীয়তা ও নমনীয়তার খোঁজে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে।”

জেঙ্গার শু মন্তব্য করেন, “সিঙ্গাপুর গত কয়েক বছর ছিল একেবারে রমরমা জায়গা, এখন একটু ম্লান হচ্ছে। যে ময়লা জমেছিল, তা পরিষ্কার করা হচ্ছে, এটাই স্বাভাবিক।”

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.