চার্লি কার্ককে হত্যা, আমেরিকার জন্য অন্ধকার মুহূর্ত: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন কনজারভেটিভ অ্যাকটিভিস্ট চার্লি কার্ক। তিনি ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন প্রভাবশালী মিত্র। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আউটডোর ডিবেট আয়োজনের জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। খবর গণমাধ্যমের।

এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শোকার্ত এবং ক্ষুব্ধ’ বলে জানিয়েছেন। তিনি এটিকে আমেরিকার জন্য একটি অন্ধকার মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন। রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এই ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প আরও বলেছেন, তার প্রশাসন এই নৃশংসতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক সহিংসতায় অংশ নেওয়া প্রতিটি ব্যক্তিকে খুঁজে বের করবে। উগ্র বামপন্থি রাজনৈতিক সহিংসতা অনেক নিরীহ মানুষকে আঘাত করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

গত বছর তাকে হত্যার চেষ্টা এবং ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান থম্পসনকে হত্যার কথাও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। দেশের এই গভীর রাজনৈতিক বিভক্তির জন্য তিনি বরাবরই ‘উগ্র বামপন্থিদের দোষ দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন।

সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন, ট্রাম্পের এমন বক্তব্য রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। এফবিআই পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল জানিয়েছেন, আগেই আটক এক সন্দেহভাজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছাদ থেকে গুলি করা হয়েছে।

গুলি চালানোর পর অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিও গণমাধ্যমের ভেরিফাই ইউনিট খতিয়ে দেখেছে। অন্য এক ভিডিওতে দেখা গেছে, গুলি করার আগে ৩১ বছর বয়সী কার্ককে গণহত্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হচ্ছে। ১৮ বছর বয়সে কার্ক টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ নামে একটি কনজারভেটিভ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এবং তার পরিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

প্রায় ২০০ গজ দূর থেকে তাকে গুলি করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রায় ২০০ মিটার (১৮২ মিটার) দূরের একটি ভবন থেকে গুলি চালানো হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস এবং ফক্স নিউজসহ যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র অ্যালেন ট্রিয়ানের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১২টা ২০ মিনিটে প্রায় ২০০ গজ দূরের একটি ভবন থেকে গুলি চালানো হয়। পরে আহত অবস্থায় তার নিরাপত্তাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সরিয়ে নেন।

হত্যাকারীর খোঁজে ঘরে ঘরে পুলিশ
ঘটনার পরপরই পুলিশ শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ এবং ক্লাস বাতিল করা হয়েছে। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে।

দুজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পরে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

চার্লি কার্কের হত্যাকারীর খোঁজে পুলিশ ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকার ঘরে ঘরে যাচ্ছে। ডিবেট অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে গণমাধ্যমের সংবাদদাতারা কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, গোলাগুলির সময় ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে ফেলে আসা যানবাহন বা অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করতে এখনও ফিরে যেতে পারেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ এলাকায় টহল দিচ্ছেন।

১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা
উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মর্মান্তিক এই গুলিবর্ষণের ঘটনার পর ওরেমের এই ক্যাম্পাসটি আপাতত বন্ধ থাকবে। ইউভিইউ ক্যাম্পাস ১১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এই সময়ে সব ক্লাস (সশরীরে বা ভার্চুয়াল), ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ইভেন্ট এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দয়া করে সেভাবে পরিকল্পনা করুন এবং আপনার সময়সূচিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এখন একটি লাল ব্যানারের সতর্কতা রয়েছে, যেখানে ১১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে আসা অতিথি চার্লি কার্কের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকাহত। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।

কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না
কার্ককে গুলি করার সময় তিন হাজারের বেশি লোক আউটডোর এই ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন— লোকজন সামনে এগিয়ে আসছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব, মঞ্চে কার্ককে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাতে দেখা গেছে এবং জনগণ আতঙ্কে পালিয়ে গেছেন।

গণমাধ্যমের মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে প্রথম বর্ষের ছাত্র গ্যাভিন বলেন, এটা একটু অবাস্তব। বিশেষ করে তখন এটা স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল। তিনি বলেন, সবাই প্রার্থনা শুরু করে… তারপর আমরা দৌড়াতে শুরু করি।

এই ডিবেট অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডাম বার্থেলোমিউ। ক্যাম্পাসে চার্লি কার্ক আসার প্রতিবাদে যারা বিক্ষোভ করছিলেন তিনি তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, একটি গুলির শব্দ শুনতে পান এবং সবাই মেঝেতে পড়ে যান।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং মানুষজন ওই স্থান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। বার্থেলোমিউ জানান, কার্কের বিরুদ্ধে ৫০ থেকে ৬০ জন বিক্ষোভ করছিলেন। গুলিবর্ষণের ঘটনার আগে অনুষ্ঠানের পরিবেশ বেশ ভালো ছিল এবং লোকজন ‘ইউএসএ’ বলে স্লোগান দিচ্ছিল।

কার্কের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ করছিলেন তারা অশ্লীল ভাষায় স্লোগান দিচ্ছিলেন বলে জানান তিনি। বার্থেলোমিউ বলেন, অনুষ্ঠানে কোনো নিরাপত্তা না থাকায় তিনি ‘অবাক’ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, কেউ আমাকে থামায়নি অথবা আমার ব্যাগও তল্লাশি করেনি।

চার্লি কার্ক কে ছিলেন?
কার্ক ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে হাই প্রোফাইল কনজারভেটিভ অ্যাকটিভিস্ট এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের একজন। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন বিশ্বস্ত সহযোগী।

২০১২ সালে ১৮ বছর বয়সে কার্ক টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি ছাত্র সংগঠন যেটার লক্ষ্য উদারপন্থি যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে রক্ষণশীল আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া।

ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বাস এবং পারিবারিক মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে বিতর্কের ক্লিপ তার সোশ্যাল মিডিয়া এবং দৈনিক পডকাস্টে প্রায়ই শেয়ার করা হতো। কার্ক দম্পতির ছোট দুই সন্তান আছে।

কার্কের নিহতের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টরা নিহত কার্কের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং সহিংসতার প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এক বিবৃতিতে বলেন, আজ একজন তরুণকে তার রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করার সময় ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে বুশের পূর্বসূরি বিল ক্লিনটন বলেন, তিনি চার্লি কার্কের হত্যায় দুঃখিত এবং ক্ষুব্ধ এবং আশা করেন আমরা সকলে কিছু গুরুতর আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে যাব। শান্তিপূর্ণভাবে বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করবো। হিলারি এবং তিনি কার্কের পরিবার ও সন্তানদের জন্য প্রার্থনা করছেন।

অর্থসূচক/