সাদিক ডাকসুর ভিপি, ফরহাদ জিএস নির্বাচিত

আবিদ ও উমামার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে ছাত্র শিবির। সংগঠনটির প্রার্থীরা ডাকসুর ভিপি-জিএসসহ সিংহভাগ পদে জয় পেয়েছে। ভিপি পদে শিবিরের সাদিক কায়েম এবং জিএস পদে এস এম ফরহাদ বিশাল ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট।

স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়েছেন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়েছেন।

জিএস পদে ছাত্রশিবিরের প্রার্থী এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৫হাজার ২৮৩ ভোট। এ ছাড়া প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট।

এজিএস পদে ছাত্রশিবিরের নেতা মুহা. মহিউদ্দীন খান ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে রাতে ভোট গণনা চলাকালেই ছাত্রদলের প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।

গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরামহীনভাবে ডাকসু এবং হল সংসদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছিল টানটান উত্তেজনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে সারাদেশে এ নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। কোন প্যানেল বা কে হবেন ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধি-সেটি নিয়ে চলতে থাকে নানা বিশ্লেষণ চলছে। তবে বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা আর অভিযোগ বাদ দিলে অনেকটা শান্তপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এবার ডাকসু নির্বাচনে ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। অন্যদিকে ১৮টি হল সংসদ নির্বাচনে ২৩৪টি পদে ১ হাজার ৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে  জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, যা মোট ভোটারের  শতাংশ।

কোন পদে কতজন লড়েছেন : এবার ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৬২ জন। মোট ৪৭১ জন প্রার্থীর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে ১১ জন এবং ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ১৩টি সদস্য পদে ২১৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে ১৮টি হল সংসদে ১৩টি পদে মোট ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

বিভিন্ন হলে প্রার্থীর সংখ্যা হলো—ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ৫৯ জন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ৩১ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬২ জন, জগন্নাথ হলে ৫৫ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৫৮ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৭৫ জন, রোকেয়া হলে ৪৫ জন, সূর্যসেন হলে ৭৫ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৬০ জন, শামসুন নাহার হলে ৩৫ জন, কবি জসীম উদ্দীন হলে ৬৮ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৭৩ জন, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৫৯ জন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩৬ জন, অমর একুশে হলে ৭৬ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৩৮ জন, বিজয় একাত্তর হলে ৬৮ জন এবং স্যার এ এফ রহমান হলে ৬২ জন।

মোট প্যানেল নয়টি: এবারের ডাকসু নির্বাচনে নয়টি প্যানেল ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল, ছাত্রশিবিরের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’, বামপন্থি শিক্ষার্থীদের ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ এবং তিনটি বামপন্থি সংগঠনের ‘অপরাজেয় ৭১ অদম্য ২৪’। এছাড়া কয়েকটি প্যানেল আংশিক মনোনয়নপত্র জমা দেয়।

 

 

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.