নতুন টেলিকম নীতিমালায় ক্ষুব্ধ আইজিডাব্লিউ
ব্যবসায়িক অস্তিত্ব রক্ষায় এখনই আন্তর্জাতিক এসএমএস সেবায় প্রবেশাধিকার দাবি
নতুন টেলিকম নীতিমালা উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আইজিডাব্লিউদের সংগঠন – ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম-আইওএফ। পাশাপাশি তারা আন্তর্জাতিক এসএমএস সেবায় এখনই তাদের প্রবেশাধিকার দাবি করছে। তাদের অভিযোগ, এই সেবার জন্য তারা লাইসেন্স প্রাপ্ত হলেও নিয়ম লঙ্ঘন করে শুরু থেকেই বিদেশি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর-এমএনও দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন তারা ন্যায্য ব্যবসায়িক হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, অন্যদিকে সরকার বছরে রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
আইওএফ এর প্রসিডেন্ট আসিফ সিরাজ রব্বানী বলেন,অবিশ্বাস্য দ্রততায় এই নীতিমালা কেবিনেটে নিয়ে আসা হল এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের আপত্তি উপেক্ষা করে অনুমোদনও করা হল। নতুন নীতিমালার ফলে, এখনো এই খাতে সামান্য যেটুকু ব্যবসা দেশীয় বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে, সেটাও বিদেশিদের কাছে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হল।
এই খাতে এমনিতেই বিদেশি এমএনও ( মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর) গুলোর নিরঙ্কুশ দাপট। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে কার্যত তাদের আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ন্যায়সঙ্গত ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা বিনষ্ট হবে। এতদিন ধরে গড়ে উঠা দেশি কোম্পানিগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। তিনি প্রশ্ন করেন, যেসব ক্ষেত্রে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা ইতমধ্যে যথেষ্ট দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জন করেছে, সে সব ব্যবসা বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে?
তিনি বলেন, শুধু আইজিডাব্লিউ খাতেই আমাদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। অনেক দক্ষ প্রযুক্তিবিদ আমাদের সাথে কাজ করছে। এই নীতিমালা তাঁদের জন্য ঝুকি তৈরী করেছে। এ পর্যন্ত আমরা বিটিআরসি কে সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছি। অথচ নতুন নীতিমালা কিংবা বিধি বিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সাথে খুব একটা সমন্বয় করা হয় না। এটা খুবই অগ্রহণযোগ্য ও দুঃখজনক।
আইওএফ প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, আইজিডব্লিউ অপারেটররা আন্তর্জাতিক ভয়েস কলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এসএমএস ব্যবসায় প্রবেশাধিকার পাবেন ধরে নিয়েই ব্যাপক বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এ ব্যবসা পরিচালনার অনুমোদন না পাওয়ায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
অপরদিকে বৈধ পথে কলের পরিমান ১০ কোটি থেকে কমে ১ কোটি ২০ লাখে নেমে আসায় আইজিডাব্লিউ’দের ব্যবসায়িক অস্তিত্ব বর্তমানে সংকটের মুখে। অনতিবিলম্বে আইজিডাব্লিউ দের আন্তর্জাতিক এসএমএস সেবা পরিচালনার অনুমতি দিলে এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসায়িক অস্তিত্ব টিকে থাকবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও 200 কোটি টাকা বাড়বে।
বিভিন্ন বিদেশি অ্যাগ্রিগেটর ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে গড়ে ৩ কোটির বেশি আন্তর্জাতিক ইনকামিং এটুপি এসএমএস বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বর্তমান গড় বাজারদর এসএমএস প্রতি ৮ সেন্ট (ইউএসডি) হিসাবে মাসে আয় ২৪ লাখ ডলার। বর্তমানে, মোবাইল অপারেটরদের থেকে বিটিআরসি সর্বোচ্চ মাত্র ১ লাখ ৫৬ হাজার ডলার আয় করতে পারে (৫.৫% হারে রাজস্ব ভাগাভাগি এবং অতিরিক্ত ১% হারে সামাজিক দায়িত্ব তহবিল )।
আসিফ সিরাজ রব্বানী’র দাবি, লাইসেন্সিং গাইডলাইন মেনে এই সেবাটি আইজিডব্লিউ এর মাধ্যমে পরিচালিত হলে বিটিআরসি কেবল আইজিডব্লিউ থেকেই ৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার (৪০% রাজস্ব ভাগাভাগি) আয় করতে পারত। উপরন্ত, আইসিএক্স এবং মোবাইল অপারেটরদের রাজস্ব ভাগাভাগি থেকে বিটিআরসি আরও ২ লাখ ৪৫ হাজার ডলার আয় করতে পারত। সব মিলিয়ে বিটিআরসির মাসিক আয় দাঁড়াত কমপক্ষে ১২ লাখ ৫ হাজার ডলার। অর্থাৎ বিটিআরসির বর্তমান আয় থেকে প্রায় ৮ গুন বৃদ্ধি পেত। তিনি আশা করেন সরকার জাতীয় স্বার্থ, কর্মসংস্থান ও দেশীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা বিবেচনায় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.